বাংলাদেশের অনেক ধরনের রোগ রয়েছে তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় অন্যতম রোগ হল তলপেটে তীব্র ব্যথা। এটি মূলত মেয়েদের বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের শতভাগ ৮০ ভাগ মেয়েরা এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। এটি এমন এক ধরনের সমস্যা যা সহজেই বুঝা যায় না। সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নের মাধ্যমে এর থেকে কিছু টা রেহাই পাওয়া যায়। মূলত, গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে। এটি অতি পরিচিত একটি রোগ যা প্রায় সকল মানুষের হয়ে থাকে। নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই এই সমস্যার দেখা যায়। এপেন্ডিসাইডের সমস্যার জন্য এটি হয়ে থাকে। তবে পুরুষের তুলনায় মহিলারা এই সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হন। মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে। আজকের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে এর বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করবো শেষ পর্যন্ত আমার সংগেই থাকবেন।
মহিলাদের কেন বেশি তলপেটে ব্যথা হয়
মহিলাদের কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে যার কারণে মহিলারা এ সমস্যাই ভুগে থাকেন। তার মধ্যে সবথেকে বেশি হয় প্রস্রাবের সংক্রমণ। যদি প্রসাব অনেক সময় বেশিসময় আটকে রাখলে মূলত প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়ে থাকে। যার ফলে তলপেটে ব্যথা হয়। তাছাড়া ডিম্বানুর সিস্ট জন্য এ সমস্যা হয়ে থাকে। মেয়েদের মাসিক চলাকালীন সময়ে যদি রক্ত নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে না এসে অন্য জায়গায় রক্ত কিছু রক্ত গিয়ে জমা হয়, এবং এভাবে জমতে জমতে চকলেটের আকার হয় তখন মূলত সিস্টে পরিণত হয়। তাছাড়া জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যার জন্য তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে। এবং এ ব্যথা কমও হতে পারে আবার অনেক সময় তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। মাসিক চলাকালীন সময়ও এ সমস্যাটা হয়ে থাকে। তাছাড়া জরায়ু টিউমারের ফলে পেলভিক ইনফেকশনের ফলে তলপেটে ব্যথা হয়। দিন দিন এই সমস্যাটা ভয়ানক আকার ধারণ করছে।
উপসর্গ কি
তলপেটের ব্যথা, ও পিঠে ব্যথা, সিজারের দাক বরাবর ব্যথা, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য এ পেট ব্যথা হয়ে থাকে। মূলত মহিলাদের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ থেকেও এই সমস্যাটা হয়ে থাকে। অনেকের পিঠে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয় না তারা এই সমস্যা কে অগ্রায্য করে ফলে, আস্তে আস্তে তীব্র আকার ধারণ করে। কারো ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় ব্যথা হতে পারে, আবার নাও হতে পারে, তাছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ রয়েছে। যেমন, পিরিয়ডের অনেক রক্তপাত হতে পারে আবার অল্প রক্তপাত হতে পারে, অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া, পিরিয়ডের সময় টয়লেটে কষ্ট পাওয়া, সহবাসের সময় এবং পরেও কষ্ট পাওয়া বা অনেক ব্যথা পাওয়া। মূলত এসবের জন্য তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
এই সমস্যা গুলো বা উপসর্গগুলো দেখা মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই দরকার। কেননা বর্তমানে, এ সমস্যাগুলো ভয়ানক আকার ধারণ করছে। এর ফলে মহিলাদের অনেক বড় বড় রোগ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামের মহিলাদের বেশি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কেননা তারা এই সমস্যাগুলো ঠিক সেভাবে গুরুত্ব দেয় না তাদের তলপেট ব্যথা করলে তারা ভাবে এটা হয়তো মাসিকের ব্যথা সেজন্য, তারা ওইভাবে গুরুত্ব দেয় না এমনকি অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিল তারা সেভাবে খেয়াল করে না ফলে আস্তে আস্তে এটি অনেক ভয়ানক এবং জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাই কোন উপসর্গ দেখা মাত্র ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া দরকার।
কোথায় এ সমস্যা দেখা দিতে পারে
সাধারণত জরায়ু ও তার আশেপাশে বিভিন্ন অংশ যেমন, খাদ্যনালী, মূত্রথলি, মূত্রনালী ইত্যাদি এই সমস্যা দেখা যায়। পেরিট্রোনিয়াম এটা এক ধরনের ঝিল্লি যে পেটের বিভিন্ন অঙ্গকে ঢেকে রাখে, তাছাড়া এ সমস্যাটা অনেক জায়গায় হয়ে থাকে। তবে বিশেষ করে, আগের কোন কাটাস্থানে, শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন, ফুসফুস, কিডনি,এমনকি নাভিতেও হতে পারে। তবে এ সমস্যাটা খুবই কম বা খুবই অল্প পরিমাণে দেখা দেয়। কিন্তু শতভাগের মধ্যে ৮০ ভাগই তলপেটের হয়ে থাকে এ ধরনের সমস্যা। সাধারণত প্রায় সকল বয়স বয়সী মহিলাদের হয়ে থাকে।
রোগ নির্ণয়
সাধারনত এ সমস্যা সমাধানের জন্য ঠিক সঠিকভাবে রুগটিকে নিরাময় করা যায় না। এমনকি এটি একেবারেও দেখা দেয় না। তবে কিছু নিয়ম বলি মেনে চললে এই সমস্যাটা কিছুটা কম দেখা দিবে। তবে কিছু কিছু চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে এই সমস্যাটা নির্ণয় করা হয়। হিস্ট্রি, আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরআই, ইত্যাদি মাধ্যমে এ সমস্যাটা নির্ণয় করা হয়।
তবে অনেক সময় আল্ট্রাসনোগ্রাফিতেও এ সমস্যাটা দেখা দেয় না। তবে এটি যদি সিস্ট আকার ধারণ করে তখন সেটি আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে। তাছাড়া এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক নিয়মাবলী এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। এ রোগ পুরোপুরি শেষ করা যায় না, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মূলত ডাক্তাররা এই রোগের জন্য প্যারাসিটামল দিয়ে থাকেন। তাছাড়া অনেক সময় অনেক ডাক্তার জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল সেটাও দিয়ে থাকেন। এ জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল অধিকগ্রহণের ফলে তলপেটে ব্যথা হয় না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে সার্জারি বা অপারেশনের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। তবে যদি এই সমস্যাটা বেশি হয় তবে অনেক ডাক্তার সার্জারি করায় না।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার
সাধারণত মূত্রথলি সংক্রমণ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মেয়েরা গঠনগত কারণে পুরুষের তুলনায় বেশি এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাছাড়া অভ্যাসগত কারণেও তাদের এ সমস্যাটা হয়ে থাকে। মেয়েদের মূত্রথলির দৈর্ঘ্য ছেলেদের তুলনায় কম হওয়ায় এই সমস্যা দেখা যায়। প্রসাব অনেকক্ষণ আটকে রাখার ফলে প্রসাবের সংক্রমণ দেখা দেয়, এবং তলপেটে ব্যথা শুরু করে। তাছাড়া এর আর উপসগ হল প্রস্রাবের সমস্যা হবে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রসাবে জ্বালাপোড়া করা, অনেক সময় প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, বাথরুমে যাওয়ার আগেই প্রস্রাব হওয়া, এগুলো উপসর্গ দেখা মাত্রই ডাক্তারের কাছে যাওয়া খুবই দরকার। কেননা, এ সমস্যা গুলো দেখা দিলে ডাক্তারের চিকিৎসা পদ্ধতি নিতে হবে।
কিভাবে সাবধানতা অবলম্বন করব
সাধারণত বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ তলপেটে ব্যথার জন্য হয়ে থাকে। তাই যেকোনো ধরনের উপসর্গ দেখা মাত্রই সেটা খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে মাসিকের সময় ব্যথা হয় সেটাও তলপেটের ব্যথা হতে পারে। কিন্তু অনেক মেয়েরা সেটা মাসিকের ব্যথা ভেবেই আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। কিন্তু, পরবর্তীতে এ সমস্যাটা বড় হতে পারে। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনেক মেয়েদের এ তলপেটের ব্যথা বছর পরেও দেখা দেয় আবার অনেক ক্ষেত্রে তারও অনেক বেশি সময় লাগে দেখা দিতে। তাছাড়া মাসিকের সময় যেমন ব্যথা করে ঠিক তেমনি তার কিছুদিন পরও এভাবে ব্যথা করে শেষ হয়ে যায়। তখন আর দেখা যায় না। কিন্তু ভিতরে এ সমস্যাটা রয়ে যায়। সেটা কেউ বুঝতে পারে না। ফলে, ডাক্তারের কাছেও যায় না এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে না। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের হয়ে থাকে।
তারা অসতর্কতার সাথে জীবন যাপন করে ফলে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেনা, আস্তে আস্তে সমস্যাটা আরো জটিল হতে থাকে। এবং একসময় এটি কিডনিকে আক্রমণ করে। ফলে কিডনি একসময় অচল হয়ে যায়। যার ফলে। মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। দেখা গেছে অনেক মেয়েদের এ ব্যথাটা দেখা দিতে দিতে কিডনি পর্যন্ত চলে যায় তখন আর কিছু করা যায় না। তাই উপসর্গ দেখা মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা একটা রূপ থেকেই হাজার রোগের সৃষ্টি। তাছাড়া অনেক মেয়েদের তলপেটে ব্যথার কারণে ডিম্বাণু সক্রিয় থাকে না, এবং তারা মা ও হতে পারে না। সাধারণত এ সমস্যাটা দেশের শতভাগ রয়েছে যারা এখনো সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছেন না। তারাই মা হওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছেন। তাই সকলের উচিত সমস্যাগুলো দেখা মাত্রই সচেতন হওয়া এবং অপরকেও সচেতন করা।