জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ পরিশ্রম করে থাকে। কেননা পরিশ্রম ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব নয়। সব থেকে ছোট প্রাণী পিপীলিকা এবং সব থেকে বিশাল প্রাণী হাতি পর্যন্ত নিজ নিজ পরিশ্রমের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। কেননা পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য লাভ করা সম্ভব নয়। সমাজে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। ক্ষুদ্র থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত গড়ে ওঠে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে। প্রবাদে রয়েছে "Industry is the key to success" । পরিশ্রম ছাড়া কখনো ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। কোন কিছু পাওয়ার জন্য অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে।
পরিশ্রম ও প্রতিভা
আজকের সমাজে পরিশ্রম ছাড়া কোন কিছুই অর্জিত হয় না। কেননা প্রকৃতি কাউকে বিনাশ্রমে কোন কিছু দান করে না। তাকে অবশ্যই পরিশ্রম করেই পেতে হয়। মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই নির্মাণ করে একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমে। পৃথিবীতে যেসব ব্যক্তি স্মরণীয় এবং বরণীয় হয়ে আছেন তারা অনেক পরিশ্রম করেছেন। দেখা গেছে অনেকের শৈশব.সুখের ছিল না। অনেক পরিশ্রমের ফলে তারা নিজের নাম পৃথিবীর ইতিহাসে লিখে নিতে পেরেছেন। পরিশ্রম না করলে কখনোই প্রতিভা বিকশিত হয় না। কেননা পরিশ্রম এবং প্রতিভা একে অপরের পরিপূরক। পরিশ্রম নির্ভর করে তার প্রতিভার উপর। যে ব্যক্তি পরিশ্রম করে তার প্রতিভা নানাভাবে ফুটে ওঠে।
শ্রমের প্রকারভেদ
পরিশ্রম মূলত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। এক. শারীরিক শ্রম দুই. মানসিক শ্রম। শারীরিক এবং মানসিক এক শ্রম একে অপরের সাথে জড়িত। সমাজের সবাই একই ধরনের শ্রমে লিপ্ত নয়। কামার, জেলে, তাঁতি, মজুর, ইত্যাদি এরা শারীরিক শ্রম দিয়ে থাকেন। আবার ডাক্তার, শিক্ষক, নার্স, উকিল, এরা মানসিক শ্রম দিয়ে থাকেন। সমাজে শারীরিক এবং মানসিক শ্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শ্রমের গুরুত্ব
মানুষের উন্নতির প্রধান চাবিকাঠি হল শ্রম। শ্রম ছাড়া কোন জাতি উন্নতি সাধন করতে পারে না। আজকের পৃথিবীতে যারা পরিশ্রম করেছেন তারা অবশ্যই উন্নতি করেছেন। ইতিহাসের পাতাই যাদের কথা আমরা স্মরণ করে থাকি তারা শ্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শ্রম ছাড়া কখনো কোন কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। কেননা এ পৃথিবী কাউকে বিনাশ্রমে মনে রাখে না। সেজন্য সকলকেই অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই ব্যক্তি তার নিজস্ব স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
কিছু পরিশ্রমী ব্যক্তিদের উদাহরণ
আজকের সমাজ এক সময়ে এত উন্নত ছিল না। ইতিহাসের দিকে তাকালে বুঝা যাবে যে আজকের সমাজের উন্নতির পিছনে অনেক মানুষের অবদান রয়েছে। তারা যদি অনেক পরিশ্রম না করতো তাহলে কখনোই আজকে আমরা এত সুযোগ-সুবিধা পেতাম না। পৃথিবীর ইতিহাসের স্বর্ণ শেখরে যারা স্মরণীয় হয়ে রয়েছে তারা নিজ শ্রমের মাধ্যমেই নিজ যোগ্যতায় এসেছেন। বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে তারা তাদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে আব্রাহাম লিংকন, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, জর্জ ওয়াশিংটন, ইত্যাদি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাছাড়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মদ সঃ আমাদের অন্যতম প্রতীক। তিনি অনেক কঠোর পরিশ্রম করতেন। তিনি তার সব কাজ নিজ হাতেই করতেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না। তাই সকলের উচিত পরিশ্রম করে নিজের জীবনকে উজ্জ্বল করা।
বাংলাদেশে শ্রমের মর্যাদা
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম একটি দেশ। এখানে দরিদ্র হওয়ার অন্যতম কারণ হলো শ্রমকে অমর্যাদা করা। বাংলাদেশের অনেক মানুষ কায়িক শ্রম করে থাকে। এদেশের অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত যার ফলে তারা বড় ধরনের চাকরি করতে পারে না। কিন্তু সমাজের সকল মানুষ কায়িক শ্রমকে অবজ্ঞা করে থাকে। মানসিক শ্রমকে তারা অনেক মর্যাদা দেয়। যার ফলে বাংলাদেশে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না।
উন্নত বিশ্বে শ্রমের মর্যাদা
উন্নত বিশ্বের মানুষেরা অনেক পরিশ্রম করে থাকে। তারা শারীরিক এবং মানসিক শ্রমকে অনেক মর্যাদা দিয়ে থাকে। কেননা সেখানে মানুষেরা শ্রমের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে জানে। বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র গুলো শ্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে আরো শক্তিশালী করতে পেরেছে। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশ যেমনঃ চীন, জাপান, ভারত, প্রাচীন গ্রিস,ইত্যাদি হলো অগণিত মানুষের কঠোর পরিশ্রমের ফসল। যার ফলে দেশ এত উন্নতি করতে পেরেছে। আবার অন্যদিকে উন্নত বিশ্ব গুলো যেমনঃ জার্মানি, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ইংল্যান্ড ইত্যাদি দেশগুলো মানুষ খুবই পরিশ্রমী। তাদের পরিশ্রম এর ফলে দেশ উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে।
উপসংহারঃ সভ্যতা বিকাশে শ্রমের অবদান
শ্রমের মাধ্যমে একজন মানুষ তার ভবিষ্যতকে সুন্দর এবং উজ্জ্বল করতে পারে। ঠিক তেমনি পরিবার এবং সমাজকেও উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারে। একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই ব্যক্তি জীবন সার্থক হয়। আবার পরিশ্রম ব্যতীত কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। কেননা অলস হয়ে জীবন যাপন করলে কখনো সফল হওয়া যায় না। পরিশ্রমের ফলে মানুষের জীবন হয়ে ওঠে সুন্দর। তাছাড়া কোন ব্যক্তি যদি বিনা শ্রমে সফল হতে চায় তাহলে সেটা নিতান্তই তার স্বপ্ন। কেননা শ্রম ছাড়া কেউই জীবনের স্বার্থক হতে পারেনি। জীবনে কোন কিছু করতে হলে তাকে অবশ্যই বারবার চেষ্টা করতে হবে এবং কঠোর অধ্যাবসায় করতে হবে। এই শ্রমের ফলে বিশ্বজগৎ আরো নিজ গতিতে এগিয়ে যাবে। শ্রম মানুষের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মানুষ যদি তার জীবনকে উপভোগ করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে পরিশ্রম করতে হবে। কেননা জীবনকে সুন্দর এবং উজ্জ্বল করতে হলে শ্রমের কোন বিকল্প নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন একমাত্র শ্রমের ফলে। আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিনি আক্রান্ত পরিশ্রম করে এ দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছেন। তিনি যদি পরিশ্রম না করতেন, বাঙ্গালীদের কে উৎসাহ না দিতেন, তাহলে কখনোই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাস করতে পারতাম না। পরিশ্রমের ফলেই এ দেশ তথা এই পৃথিবী উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে। একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই সবকিছু জয় করা সম্ভব। অলস হয়ে না থেকে, ভয় না পেয়ে, নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। একমাত্র শ্রম মানুষকে নিজের পরিচয়ে বাঁচতে সাহায্য করে। তাই মানব জীবনে পরিশ্রমের ভূমিকা অনেক। তাই সকলের উচিত জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য অনেক বেশি পরিমাণে পরিশ্রম করা।