হরমোনজনিত যে অসুখের কারণে নারীদের সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে। বর্তমানে সব থেকে অন্যতম একটি সমস্যা হলো পিসিওস (PCOS) । এটি প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের হয়ে থাকে। এ সমস্যার সমাধানের জন্য অনেকেই অনেক ধরনের চিকিৎসা করে থাকেন। তবে সঠিক চিকিৎসার অভাবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ হতে পারছেন না। তবে এ সমস্যার জন্য অনেকেই মা হওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছেন। বর্তমানে অনেকেরই বাচ্চা হয় না যার ফলে অনেক চিকিৎসা করে থাকে কিন্তু এ প্রব্লেম আক্রান্ত হওয়ার ফলে তারা মা হতে পারছেন না। আজ আপনাদের সব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে জানানো হবে কিভাবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ করা যায় এবং কিভাবে মা হওয়া যায়। মূলত, ওভারিতে অনেকে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কিভাবে হয়, কখন হয়, বুঝবেন কিভাবে, আপনি ওভারি সমস্যায় আক্রান্ত কিনা, সবকিছু আমাদের এই আর্টিকেলে বুঝতে পারবেন।
পিসিওসের লক্ষণ বা উপসর্গ (PCOS)
মূলত অনেক ধরনের সমস্যার কারণে এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে তবে এটি সেভাবে খেয়াল করছেন না। কিছু উপসর্গ রয়েছে যার মাধ্যমে বোঝা যায় যে, উক্ত ব্যক্তিটি আক্রান্ত কিনা। তার মধ্যে অন্যতম হলো অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া, অনেকদিন ধরে পিরিয়ড না হওয়া, যদি কোন মহিলার নিয়মিত পিরিয়ড হয় তবে ডিম্বাশয় থেকে ডিম বের হয় না হলে শুক্রাণুর সাথে ডিম্বাণু মিলিত হয় না, যার কারণে মা হওয়া হতে পারে না। মূলত একজন মহিলার স্বাভাবিক মাসিক হয় ২১ থেকে ৩৫ দিন পর পর যদি কোন ব্যক্তির সেই নির্দিষ্ট দিনটি অতিক্রম করে দুই থেকে তিন মাস পর পর মাসিক হয় এবং তা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না থেকে কম সময় বা বেশি সময় ধরে রক্ত যায় তবে ধরে নিতে হবে পিসিওসে আক্রান্ত হয়েছে।
আবার এন্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য হলেও এ সমস্যা হয়ে থাকে। মূলত এন্ড্রোজেন হল পুরুষদের হরমোন এটি যদি অধিক পরিমাণে কোন মহিলার থাকে তবে তার শরীরে লোম, গোঁফ ইত্যাদি হয়ে থাকে। তাছাড়া ব্রণ হওয়া, কারণ ছাড়া ওজন বৃদ্ধি, কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় হঠাৎ শরীরে ওজন বেড়ে যায় এটাও এক ধরনের সমস্যা। আবার দেখা গেছে অনেকের চুল পাতলা হয়ে যায়, এটাও এক ধরনের পিছেওসের উপসর্গ বা লক্ষণ। আবার বন্ধ্যাত্বের সমস্যা জন্য এরূপটি হয়ে থাকে।
Polycystic কি
এটা কোন সত্যিকারের সিস্ট নয়, এই সমস্যা জন্য রোগ টি হয়ে থাকে মূলত ওভারি সমস্যা। ওভারের চারিদিকে ছোট, ছোট, আমরা বলি যে পানি জমে হরমোনাল পরিবর্তন হয় এবং সে পরিবর্তনের ফলে ওভারি বড় হয় এবং চারদিকে পলির দলা যুক্ত হয় এবং সেখান থেকে কিছু হরমোন যুক্ত হয় এগুলো কিছু পরিবর্তন করে দেয় তার মধ্যে একটি হল মাসিকের অনিয়মিত করা। তবে শরীরের ওজন যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায় তাহলে এটি হলো প্রধান সমস্যা। কেননা শারীরিক সমস্যার মধ্যে এটি অনেক জটিল। যার কারণে বাচ্চা কনসিভ করতে সমস্যা হয় এবং ওভারি সমস্যা দেখা দেয়। মূলত শরীরের ওজন ঠিক রাখতে পারলে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, দেখা গেছে প্রতি শতকের মধ্যে বেশিরভাগই শারীরিক এই সমস্যায় ভুগছেন। যার ফলে এই সময় ওভারি সমস্যা হয় এবং ডিম্বাণুর ডিম বড় হতে পারে না এবং বাচ্চা ধারণ করতে পারে না।
সতর্কতা অবলম্বন
কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা যায়, এবং সেইসাথে এ সমস্যা সমাধান করা যায়, এ নিয়ে বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করা হলো। মূলত বেশিরভাগ মহিলাদের প্রধান সমস্যা হলো বাচ্চা না হওয়া। এটা মূলত হরমোনের সমস্যা। অনেকেই ধারণা করে থাকেন, হরমোনাল প্রবলেমের জন্য বাচ্চা হয় না তাছাড়া, যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং সতর্কতা অবলম্বন করে না তারাই আক্রান্ত হয়ে থাকে। পিসিওসে (PCOS) সমস্যা হয়ে থাকলে যে বাচ্চা হবে না এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল, মূলত হরমোনের প্রবলেম এর জন্য বাচ্চা হয় না।
আমাদের পিসিওসের উপসর্গ দেখা মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, এবং মাসিক নিয়মিত হয় কিনা সেদিক বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এবং শারীরিক কোন ত্রুটি হলেও সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে। কেননা শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য এ সমস্যা হয়ে থাকে। এবং সব প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা যায় শারীরিক ওজন বৃদ্ধি। পাওয়া মূলত শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলে তখন অনেকের বাচ্চা কনসিভ করতে পারে না সেজন্য নিয়মিত সুষম খাবার খেয়ে শরীর ঠিক রাখতে হবে এবং খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি রাখতে হবে, তার পাশাপাশি ডিম, কলা,দুধ, ইত্যাদি ফলমূল রাখতেও পারেন।
কি কারনে Polycystic Overy Syndrome হয়
Polycystic Overy Syndrome রোগটা ঠিক নির্দিষ্টভাবে নিরাময় করা যায় না, এবং এটি ঠিক জানাও যায়নি। মূলত এ সমস্যাটা হয়ে থাকে বংশ পরম্পরায়। যদি কারো মা, বা বংশের কারো এ সমস্যা হয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তিটির হয়ে থাকে। আবার ইনসুনিল বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়া, কেননা আমরা জানি ইনসুলিন মূলত শরীরের চিনির পরিমাণ ঠিক রাখে। ইনসুলিন একটি হরমোন, যদি শরীরে এই হরমোনের সমস্যা হয়ে থাকে, তবে সমস্যা হয়। ইনসুলিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে সাধারণত ডায়াবেটিসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, এবং সে সমস্যা গুলো থেকে শরীরের হরমোন এর প্রবলেম নানা ভাবে ঘুরতে থাকে, এবং হরমোনাল প্রবলেমের জন্য ডিম্বাণু সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা, ফলে বাচ্চা অনেকের বাচ্চা হয় না। তাই আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে শরীরে এই ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা।
দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা
polycystic overy syndrome এর প্রধান অন্যতম সমস্যা হিসেবে ধরা হয় দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যা। যেমন, শরীরে বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ হওয়া, শারীরিক কোন হরমোন যদি তার নির্দিষ্ট কাজ না করে, তবে এ সমস্যা দেখা দেয়। আবার টাইপ টু ডায়াবেটিস, মূলত ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকেও হয়ে থাকে তাই সকলের উচিত ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখা, কেননা এখন বেশিরভাগ মানুষের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। মূলত ডায়াবেটিসের জন্য অনেকের হরমোন নিঃসরণ হয় এবং যার ফলে বিভিন্ন ধরনের শরীরের ভেতর কার্যবলি সম্পূর্ণ হয় না। এবং বাচ্চা নানান কারণে কনসিভ হতে পারে না। অপরদিকে, অন্যতম সমস্যা হিসেবে ডিপ্রেশন কে ধরা হয়েছে। ডিপ্রেশন এমন এক ধরনের সমস্যা, যা রোগের মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
যদি কোন মহিলা অধিক পরিমাণে ডিপ্রেশনে ভুগেন, তাহলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও পিসিওস হয়।অপরদিকে উচ্চ রক্তচাপের ফলে শরীরে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। এবং নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে। অ্যান্ড্রোমিটারিয়াল ক্যান্সার অন্যতম সমস্যা। এর ফলে এ সমস্যা দেখা যায়। তবে খুব পরিমাণে এ ক্যান্সার টি হতে পারে না। যদি কোন উপসর্গ দেখা মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করা হয় তখন আর কোন সমস্যা দেখা দেয় না।
ওভারি সিস্ট কত প্রকার এবং কি কি
ওভারি সিস্ট মূলত এমন এক ধরনের সমস্যা যা প্রায় সকল বয়সী দের হয়ে থাকে। এটি মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ফাংশনাল সিস্ট এবং অপরটি হলো পলিস্টিক সিস্ট। এই দুই ধরনের সিস্ট বিভিন্ন সমস্যা করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফাংশনাল সিস্ট হয়ে থাকে। মূলত ওভারি থেকে ডিম না ফুটলে অথবা ডিম ফুটার প্রায় হোলি কণাগুলো চুপসে সিস্ট সৃষ্টি হয়, এটা মূলত ফাংশনাল সিস্ট। এতে তেমন ভয়ানক সমস্যা দেখা দেয় না। তবে অনেকের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এ সমস্যা দেখা দিলে, কিছুটা সতর্ক থাকা দরকার এবং ডাক্তার পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। অপরদিকে, পলিস্টিক সিস্ট নানা ধরনের সমস্যা করে থাকে। এটা অনেকের হয়ে থাকে। এ সমস্যা কারো থাকলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং নিয়ম অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। নইলে পরবর্তীতে, এটা ভয়ানক রূপ দেখা দিতে পারে। কেননা, ওভারিতে যে ছোট ফলিকণা থাকে সেগুলো, পূর্ণাঙ্গ না হলে ঠিক পলিস্টিক সিস্ট হয়। অবিবাহিতদের যদি পলিস্টিক সিস্ট হয়, তখন এটি সাথে সাথে চিকিৎসা নেয়া দরকার।
কেননা, এই সমস্যার জন্য অনিয়মিত পিরিয়ড হয়। আরো নিয়মিত পিরিয়ড হলে, পরবর্তীতে নানা প্রকার অসুখ দেখা দিতে পারে। যদি বিবাহিতদের পলিস্টিক সিস্ট হয়ে থাকে তখন সতর্কতার সাথে তার নিরাময় করতে হবে। কেননা তাদের অনিয়মিত মাসিক হলে ডিম্বাণু ডিম বড় হতে পারে না হলে তারা মা হতে পারে না। আবার অনেকের যদি এই পলিস্টিক সিস্ট এর পরিণাম হতে পারে বন্ধ্যাত্ব। যার ফলে সে মা হতে পারে না এবং আরো নানা ধরনের জটিলতায় ভুগতে পারেন।
চিকিৎসা
মূলত এর কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে এর চিকিৎসা না থাকলেও এর উপসর্গের চিকিৎসা রয়েছে । সঠিক সময়ে এর উপসর্গের চিকিৎসা করে অনেক মেয়েদের সমস্যা সমাধান করে থাকে। তাছাড়া অনেক ডাক্তারগণ এসব রোগীদেরকে নিয়ম শৃঙ্খলা অনুযায়ী থাকার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে বলেন, খাদ্য তালিকায় যেন সুষম খাদ্য থাকে সেদিক বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে বলেছেন। আমিষ জাতীয় খাবার, পুষ্টিকর খাবার, ইত্যাদি খেতে হবে এবং এ সমস্যার কোন উপসর্গ দেখা মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, তাহলেই বাচ্চা সহজে কনসিভ হবে এবং উক্ত সমস্যা আর দেখা যাবে না।