বর্তমান সময়ে মেয়েদের মাসিকের সমস্যা একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১০০ ভাগের মধ্যে ৪০ ভাগ মেয়েরাই মাসিকের সমস্যা নিয়ে ভুগছে। মাসিক কেন দেরিতে হয়? মাসিক নিয়মিত করার উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। মাসিক সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন।
অনিয়মিত মাসিক কি
সাধারণত মেয়েদের ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে মাসিক হওয়াকে নিয়মিত মাসিক বলে। কিন্তু কারো যদি ২১ দিনের কমে মাসিক হয়ে যায় অথবা ২৫ দিনের বেশি তাও মাসিক না হয় তাহলে তাকে অনিয়মিত মাসিক বলা হয়। স্বাভাবিক মাসিক চক্র ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যেই হয়ে থাকে। আমাদের দেশের অনেক মেয়েরাই অনিয়মিত মাসিক নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।
মাসিক কেন অনিয়মিত হয়
মাসিক অনিয়মিত হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কারণ আছে হরমোনাল। সবারই শারীরিক গঠন একরকম নই, শরীরের গঠন বেঁধে একেকজনের শরীরের হরমোন এক এক রকম হয়ে থাকে। বেশিরভাগ মেয়েদের হরমোনাল সমস্যার কারণে মাসিক অনিয়মিত হয়। এ ছাড়া আরেকটি কারণ হলো রক্তস্বল্পতা। যাদের শরীরের রক্তের ঘাটতি পরে তাদের সময়মত মাসিক হয় না। সে ক্ষেত্রে তারা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় ভুগে।
মাসিক অনিয়মিত হওয়ার আরো কিছু কারণঃ বিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি বেশিরভাগ দেখা যায়। কারণ বিবাহিত মেয়েরা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিল খেয়ে থাকেন। আর এই পিল মাসের চক্রকে বন্ধ করে দেয়। সে ক্ষেত্রে দেখা যায় কারো কারো তিন মাসের বেশি সময় ধরে মাসিক হয় না।
আরো পড়ুনঃ কেনো মহিলাদের তলপেটে তীব্র ব্যথা হয়।
অনিয়মিত মাসিক চক্র কিভাবে হয়
যদি কারো এক মাসের ভিতরে দুই থেকে তিনবার মাসিক হয় তাহলে তাকে অনিয়মিত মাসিক চক্র বলে। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুই থাকে তিন মাসে বেশি হয়ে গেছে কিন্তু মাসিক হচ্ছে না। এটিও এক ধরনের অনিয়মিত মাসিক চক্র। অনেকের ক্ষেত্রে তো ৮ মাসের বেশি সময় ধরেও বন্ধ থাকে। এই সমস্যাটি বর্তমানে খুব জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যাদের এই ধরনের সমস্যা আছে, তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করার উপায়
মাসিক নিয়মিত করার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ও রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের অনিয়মিত মাসিক চক্রকে নিয়মিত করতে পারি। মাসিক নিয়মিত করার উপায় গুলো আলোচনা করা হলো।
১. আমরা আমাদের কিছু খাবার দাবার পরিবর্তনের মাধ্যমে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে পারি। যেমন টক জাতীয় ফল খাওয়া। আমরা যদি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টক জাতীয় খাবার রাখি, তাহলে আমাদের অনিয়মিত মাসিক চক্র ধীরে ধীরে নিয়মিত মাসিকে পরিনত হবে। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য টক জাতীয় খাদ্য রাখাটা জরুরি।
২. আমাদের মাসিক চক্র টা যদি খুব বেশি দিন বন্ধ থাকে, তাহলে আমরা ঘরোয়া কিছু টোটকা তৈরি করার মাধ্যমে আমাদের অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে পারি। যেমন আদা কুচি ও হলুদ হালকা গরম পানির মধ্যে ফুটিয়ে পান করলে আমাদের দ্রুত মাসিক চলে আসবে। তাই আমাদের অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে এই পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর।
৩. ব্যায়ামের মাধ্যমেও আমরা আমাদের অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে পারি। যেমন জাম্পিং। দীর্ঘ সময় জাম্পিং করলেও আমাদের মাসিক চলে আস। এটা এক দিনে মাসিক হওয়ানোর উপায়। তাই যাদের দীর্ঘ দিন সময় ধরে মাসিক বন্ধ আছে, তারা এক দিনের মধ্যে এই পদ্ধতিটি অবলম্বন করে মাসিক নিয়ে আসতে পারে।
৪. যাদের দীর্ঘ দিন সময় ধরে মাসিক বন্ধ আছে, তারা আরো একটি বিষয় অবলম্বন করতে পারেন, সেটা হলো ওজন কমানো। অনেকের এমন হয় যে ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। তাদের ক্ষেএে মাসিক বন্ধ হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে অর্থাৎ দীর্ঘ সময় পর পর মাসিক দেখা দেয় তাও অল্প সময়ের জন্য। তাই যাদের এধরনের সমস্যা আছে তারা ওজন কমানোর মাধ্যমেও তাদের মাসিক স্বাভাবিক করতে পারেন।
৫. আরেকটা বিষয় হলো বেশি করে পানি পান করা। যারা কম পানি পান করেন তাদের মাসিক অনিয়মিত ভাবে হয়। তাই বেশি করে পানি পান করার মাধ্যমেও আমরা আমাদের মাসিক চক্র কে নিয়মিত করতে পারি।
মাসিক নিয়মিত করার ঔষধ
বিভিন্ন ঔষধ গ্রহন করেও আমরা আমাদের অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে পারি। মাসিক নিয়মিত করার একটি ঔষধ হলো নরমেন্স। বিভিন্ন ডাক্তাররা অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত করতে এই ঔষধ টি দিয়ে থাকেন। এই ঔষধটি খাওয়ার ১০-১২ দিনের মধ্যে মাসিক চলে আসতে পারে। আর যাদের এক মাসের মধ্যে ২-৩ বার মাসিক হয় তারাও এই ঔষধ টি গ্রহণ করতে পারেন। ফলে তাদের মাসিক স্বাভাবিক হতে থাকবে। তবে ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারন, ডাক্তার রা রোগীকে ঔষধ দেওয়ার আগে তাদের হরমোনাল টেস্ট করিয়ে থাকেন, তারপর তাদের ঔষধ প্রদান করেন।
অনিয়মিত মাসিক হলে কি হয়
অনিয়মিত মাসিক একটি বড় ধরনের সমস্যা। এই সমস্যায় যারা ভোগে ভবিষ্যতে তারা অনেক বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। মাসিক অনিয়মিত হলে বাচ্চা হওয়ার ক্ষেএে সমস্যা দেখা দেয়। যাদের দীর্ঘদিন ধরে মাসিক বন্ধ থাকে তাদের দেখা যায় অনেক বছর বাচ্চা হয় না। এছাড়াও যাদের ১ মাসের মধ্যে ২-৩ বার মাসিক হয় তাদের রক্তশূন্যতা দেখা যায়। এরকম আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই মাসিক নিয়মিত হওয়াটা খুবই জরুরি।
আমরা অনেকেই এই মাসিক কে অবহেলা করে থাকি৷ আমরা এটা ভাবি যে মাসিক বন্ধ আছে, মাসিক হচ্ছে না, হয়তো হবেই কোন এক সময়৷ আমাদের এই ধারনাই আমাদের বড় সমস্যায় ফেলে দেয়। তাই আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। লজ্জা না পেয়ে ডাক্তারকে সব সমস্যার কথা খোলে বলতে হবে। তাহলেই আমরা এই সমস্যা হতে মুক্ত হতে পারবো।