Home সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা যেসব খাবার খেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে - সেসব খাবার সম্পর্কে জেনে নিন

Thumb

যেসব খাবার খেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে - সেসব খাবার সম্পর্কে জেনে নিন

আমরা বাঙালি। আর বাঙালিরা ভোজনরসিক হয়ে থাকে। আমরা চাল, ডাল, আলু, মাছ, মাংস ইত্যাদি ছাড়াও কয়েক হাজার প্রকারের খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু সব ধরনের খাবার আমাদের শরীরের জন্য যথাযোগ্য নয়। আমাদের অজান্তেই আমরা এমন কিছু খাবার গ্রহণ করে থাকি যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।  আপাতদৃষ্টিতে কিছু কিছু খাবার আমাদের শরীরের জন্য যথাযোগ্য মনে হলেও, এই খাবার গুলোই আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে। কিছু কিছু পুষ্টিকর খাবারও মাঝে মাঝে বিশেষ অবস্থায় বিষাক্ত হয়ে ওঠে। আমাদের অজান্তেই আমরা এসব খাবার গ্রহন করে ফেলি। আবার এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো গ্রহণ করার সাথে সাথে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। দীর্ঘদিন পর এই খাবারের প্রভাব আমাদের স্বাস্থ্যের উপর পড়ে।

যেসব খাবার আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর, এরূপ কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হলোঃ

পটকা মাছ বা পাফার ফিসঃ এই মাছটি একটি সামুদ্রিক মাছ। এই মাছটি বিষাক্ত নয়। কিন্তু এই মাছের মধ্যেই বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে। এই মাছটি বেশ পুষ্টিকর কিন্তু সঠিকভাবে মাছটি গ্রহন করতে না পারলে, মাছটি খাওয়ার কয়ক ঘন্টার মধ্যেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। পটকা মাছের ভিতরে থাকে বিষাক্ত নিউরোটক্সিন। এই নিউরোটক্সিন সায়ানাইডের তুলনায় বেশি ক্ষতিকর। কোনভাবে এই বিষাক্ত পদার্থটি আমাদের পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে৷ তাই পটকা মাছ খাওয়ার আগে এর শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থটি আলাদা করে তারপর খেতে হবে। তা না হলে সাথে সাথে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। তাই বিষাক্ত পদার্থটি কেটে আলাদা না করে গ্রহন করা উচিত নয়। এই ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।


মাশরুমঃ মাশরুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু সব ধরনের মাশরুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। মাশরুম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, টিউমার কোষকেও ধ্বংস করতে সাহায্য করে মাশরুম। যেসব মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভোগে, তাদের জন্য মাশরুম খুবই উপকারী একটি খাবার। হজমেও সাহায্য করে থাকে এই মাশরুম। এছাড়াও বাত ব্যথার জন্যও অনেকে মাশরুম খেয়ে থাকেন। মাশরুম বাত ব্যথার জন্যও খুবই উপকারী একটি খাবার। মাশরুম বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। আমাদের দেশে নানা জাতের মাশরুম চাষ করা হয়। এর মধ্যে সব ধরনের মাশরুম খাওয়ার উপযোগী নয়। মাশরুমের জাতের মধ্যে বুনো মাশরুম সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত। এছাড়াও ব্যাঙের ছাতা বলে পরিচিত মাশরুমটি ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এসব ক্ষতিকর মাশরুমে এক ধরনের ছএাক থাকে যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়। লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা এমনকি মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। তাই মাশরুম খাওয়ার সময় আমাদের সতর্ক অবলম্বন করা উচিত।


খেসারিঃ আমরা বাঙালিরা ভাত ডাল খেতে অনেক পছন্দ করি। মসুর ও মুগ ডালের পাশাপাশি আমরা খেসারি ডালও কেয়ে থাকি। কিন্তু এই ডাল পরিমিত কেতে হবে। বেশি পরিমানে এই ডাল খাওয়ার ফলে শরীরের নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই ডালে অ্যালানাইন নামক এক ধরনের এসিড থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই খাবার অতিরিক্ত গ্রহন করার ফলে পঙ্গুত্ব সৃষ্টি হতে পারে। এই  রোগের লক্ষণ হটাৎ করে দেখা যায়। মাঝে মাঝে হাটতে যেয়ে অসুবিধা, পা অবস হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপক্রম দেখা দিতে পারে। তাই বেশিদিন ধরে এই খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।


আলুঃ বাংলাদেশের খাদ্য তালিকায় আলু খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। সব ধরনের খাবারের মধ্যেই আলু দেখতে পাওয়া যায়। আলুতে শেকড় জন্মালে গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড নামক এক ধরনের এডিডের জম্ম হয় যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আলু দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে আলুতে এই এসিডের জম্ম হয়। আলু দীর্ঘ দিন পড়ে থাকলে এতে যে লাল গাদ হয় তাতে এই এসিডটি দেখতে পাওয়া যায়। এই উপাদানটি কেও বেশি পরিমানে খেয়ে ফেললে মানুষের মৃত্যু ও হতে পারে। এছাড়া আলুতে মাঝে মাঝে যে সবুজ রঙের পদার্থ পাওয়া যায় সেটাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমাদের সাবধানতার সাথে আলু খাওয়া উচিত।


টমেটোঃ টমেটোতে অ্যালকালাই নামক একধরনের পদার্থ থাকে যা পাকস্থলীর ক্ষতি সাধন করে। এছাড়া টমেটোর পাতাতেও এই উপাদান দেখতে পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের জন্য যথাযোগ্য নয়। কাচা টমেটোর ভিতর এই উপাদানটি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। তাই বেশি পরিমানে কাচা টমেটো খাওয়া উচিত নয়। টমেটো ভালো করে সিদ্ধ করে রান্না করে খাওয়া উচিত। টমেটো গাছের পাতা খাওয়াও উচিত নয়। এতে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে।


কাজু বাদামঃ কাজু বাদাম খুবই পুষ্টি সম্পন্ন একটি খাবার। কাজু বাদামের দুইটি জাত রয়েছে। একটি মিষ্টি কাজুবাদাম আর অপরটি তেতু কাজুবাদাম। মিষ্টি কাজুবাদামে পুষ্টি তাকলেও তেতু কাজুবাদামে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামক একধরনের পদার্থ থাকে। এই উপাদানটি শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। কাচা অবস্থায় কাজুবাদাম খাওয়া উচিত নয়।


আপেলঃ আপেলে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কিন্তু আপেলের বিচিতে একধরনের সায়ানাইড থাকে যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। বেশি পরিমানে আপেলের বিচি শরীরে প্রবেশ করলে মানুষের মৃত্যু ও হতে পারে। এই সায়ানাইড একধরনের মারাত্মক বিষ। বিচিসহ আপেলের জুস তৈরি করা হলে ঐ জুসে একধরনের বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তবে বিচি বাদ দিয়ে আপেলের জুস খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ।


কাচা মধুঃ মধু আমাদের মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। তবে পাস্তুরিত করা হয়নি এমন মধু শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এমন মধুতে অনেক বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে। এই মধু গ্রহন করে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। বমি বমি ভাব হওয়া, মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই মধু গ্রহন করার আগে একে ভালো করে প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। মদু সেবনের পূর্বে এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে মধুর মধ্যে যেনো মৌমাছির চাকের কোন অংশ না থাকে।


মটরশুঁটি-শিমের বিচিঃ মটরশুঁটি ও শিমের বিচি খুবই জনপ্রিয় ও পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি খাবার। তবে মটরশুঁটি ও শিমের বিচিতে একধরনের ক্ষতিকর পদার্থ থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই মটরশুঁটি ও শিমের বিচি রান্না করার আগে ১৫ মিনিট ধরে পানিতে বিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর রান্না করে খেলে কোন সমস্যা হয় না। তাই আমাদের সতর্কতার সাথে মটরশুঁটি ও শিমের বিচি গ্রহণ করা উচিত।


কামরাঙাঃ কামরাঙা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল। এটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফলের মধ্যে একটি। সাভাবিক মানুষ এই ফল খেলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তাদের এই ফল খাওয়া উচিত নয়। এতে মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনে।


কচুঃ কচু একটি পুষ্টিকর সবজি। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কচু খেয়ে থাকে। তবে কচু খাওয়ার ফলে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে।  কারন, কচুতে অক্সালেট নামক এক ধরনের পদার্থ থাকে। এতে মৃত্যু ও ঘটতে পারে। তাই কচু খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।


ডিমঃ ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার। কিন্তু কাচা ডিম, আধা সিদ্ধ ডিম খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য কাচা ডিম, আধা সিদ্ধ ডিম একেবারেই নিষিদ্ধ। তাই আমাদের ডিম ও সতর্কতার সাথে খেতে হবে।


বিশেষ সতর্কতাঃ আমাদের বেচে থাকার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু খাবার যেনো মানসম্মত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রেখে খাবার খেলে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো। খাবার আমাদের প্রান বাচায়। এই খাবার যাতে আমাদের মৃত্যুর কারন না হয় সেদিকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে খাবার গ্রহণ করা উচিত।