Home সুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা হটাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কি বিপদজনক? - মানুষ কেনো হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে যায়

Thumb

হটাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কি বিপদজনক? - মানুষ কেনো হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে যায়

মানুষ কেনো হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে যায়, এর ফলে কি হতে পারে? এই অস্বাভাবিক ভাবে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কি কোন ভয়ংকর রোগের লক্ষণ? এসব প্রশ্নের উওর পেতে আজকের আর্টিকেলটি মন দিয়ে পড়ুন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন মানুষ কেনো হটাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিঃ স্বাভাবিক ভাবে সজ্ঞানহীনতা হয়ে যাওয়া বা অচেতন হয়ে যাওয়াকে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বলে।

মানুষ কেনো অজ্ঞান হয়ে যায়

অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কোন মানুষ এমনি এমনি অজ্ঞান হয়ে যায় না। মানুষের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পিছনে অবশ্যই কিছু না কিছু কারণ আছে। মানুষের ব্রেনে কোন কারণে অক্সিজেনের অভাব ঘটলে বা অক্সিজেন সাপ্লাই কমে গেলে মানুষ অচেতন হয়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

কেনো অক্সিজেনের অভাব ঘটে

মানুষ যখন স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে থাকে তখন মানুষের ব্রেন আর হার্ট একই পজিশনে থাকে। তাই হার্ট থেকে ব্রেনে রক্ত চলাচলে কোন সমস্যা হয় না। হার্ট থেকে ব্রেনে এই রক্ত চলাচল মানুষের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই রক্ত চলাচল কোন কারনে বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে পরে। এছাড়া মানুষ যখন দাঁড়িয়ে থাকে তখন তাদের হার্ট আর ব্রেন নিচে ও উপরের লেভেলে থাকে। তখনো মানুষের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। যদি কখনো মানুষের হার্ট ও ব্রেনের মধ্যে সম্পর্ক সামঞ্জস্য না হয় তাহলে হার্ট থেকে ব্রেনে রক্ত চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মানুষ তার স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়।

মানুষের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আরো কিছু কারণঃ কিছু কিছু মানুষ আছে যারা রক্ত দেখে ভয় পেয়ে যায়। এই ভয়ে তাদের ব্রেনে চাপ পড়ে। ফলে সে তার স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও কিছু কিছু মানুষ আছে যারা আচমকা কোন খবর শুনলে ভয় পেয়ে যায়। এই ভয় তাকে অস্বাভাবিক করে তোলতে পারে। শুধু তাই নয় এরকম ভয় থেকে মানুষ স্টোক ও করতে পারে। তাই যারা হঠাৎ কোন খবর শুনলে ভয় পেয়ে যায় তাদেরকে এরকম কোন খবর দেওয়া উচিত নয়।

এছাড়া আরো কারন আছে যার ফলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যেমন এক্সিডেন্ট একটি মারাত্মক ঘটনা। অনেক মানুষ আছে যারা এক্সিডেন্ট এর খবর শুনে খুবই ভিত হয়ে যায়। এই ভয় এর ফল গিয়ে পড়ে তাদের ব্রেনে। ব্রেনে চাপ পড়ার কারনে মানুষ আচমকাই তার স্বাভাবিক সজ্ঞানতা হারিয়ে ফেলে। ফলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাই হুটহাট করে কাওকে এরকম এক্সিডেন্ট এরবখবর দেওয়া উচিত নয়। এতে মানুষ শুধু অজ্ঞান হয়ে যাওয়া নয়। সে স্টোক ও করতে পারে। বড় ধরনের কোন স্টোক হয়ে গেয়ে মানুষ কোমায় ও চলে যেতে পারে। তাই আমাদের এসব ব্যাপার থেকে খুবই সতর্ক থাকা উচিত।

আরো পড়ুন মানুষ কেনো অজ্ঞান হয়ে যায়

অনেক সময় এরকম ঘটনাও ঘটে থাকে যে, কোন মানুষ দীর্ঘক্ষণ রোদে দাড়িয়ে থাকার ফলে সে হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে যায় বা অচেতন হয়ে যায়। এরকমটা কেনো হয়? আমাদের শরীরে কিছু নার্ভ থাকে এই নার্ভগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিলে বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখালে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। হ্রদস্পন্দন বেড়ে গেলেও মানুষের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু তাই নয়, মানুষের রক্ত চাপ বেড়ে গেলেও সে অচেতন হয়ে পড়তে পারে। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গেলেও মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

আরো একটা করন হলো বিনোদন মূলক। আমরা অনেকেই হরর মুভি দেখতে খুব পছন্দ করি। কিন্তু যাদের হার্ট দূর্বল তাদের এ ধরনের মুভি দেখা কোনভাবে উচিত নয়। এ ধরনের মুভি দেখে ভয় পেলে সেটা ব্রেনের উপর প্রভাব ফেলে ফলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। তাই এধরনের হরর মুভি দেখা থেকেও বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও অনেকে আছে যারা ইনজেকশন নিতে ভয় পায়। ডাক্তার যখন রোগীকে ইনজেকশন দিতে যায় তখন সে ভয় পেয়ে নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এরকম কারনে অজ্ঞান হয়ে গেলে ভয়ের কোন কারণ নেই। কিছুক্ষণ পর সে আবার তার জ্ঞান ফিরে পাবে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

কিছু কিছু রোগের কারনেও মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যেমন হৃদরোগ, এক্ষেত্রে মানুষ ছোট ছোট হার্ট এটাক করে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। মৃগি রোগের কারনেও এই সমস্যাটি দেখা দেয়। যাদের মৃগি রোগ আছে তাদের সাধারণত খিচুনি হয়। আর এই খিচুনির কারনেও সে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। যারা ডায়াবেটিস রোগী তারাও মাঝে মাঝে এ সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাদের শর্করার লেভেল যদি ৩.৫ এর নিচে নেমে যায় তাহলে তারা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। শরীরে লবণ ও পানির পরিমাণ কমে গেলে এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও যাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ কম, তারাও মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

অজ্ঞান হওয়ার লক্ষণ

অজ্ঞান হওয়ার আগে মাঝে মাঝে কিছু লক্ষণ ও প্রকাশ পায়। যেমন- মাথা হালকা হয়ে যাওয়া, মুখ ফেকাশে হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া ইত্যাদি। এসব লক্ষন প্রকাশ পাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। তাই এসব রোগের কারনে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এজন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দেখতে হবে যে শরীরে রক্তের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা, লবণ ও পানির পরিমাণ স্বাভাবিক আছে কিনা, হৃদরোগ আছে কিনা, এসবের কোন একটা ঘাটতি থাকলে কোন সমস্যা হলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

করনীয়ঃ এ ধরনের সমস্যার জন্য কিছু প্রদক্ষেপ আছে। বেশিক্ষণ রোদে দাড়িয়ে থাকা যাবে না। গরমের দিনে রোদের মধ্যে বেশি ঘোরাঘুরি করা যাবে না। বেশি পরিমানে পানি ক্ষেতে হবে। তাহলে শরীরের পানির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। যদি কারো এমন অনুভব হয় যে সে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে সে যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে তাকে বসে যেতে হবে অথবা শুয়ে পড়তে হবে। এতে শরীরের রক্ত চলাচল নিম্ন ভাগ থেকে উপরের দিকে চলে আসবে ফলে রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ বোধ করবে। এছাড়া রক্ত চলাচল বাড়ানোর জন্য পা উপরের দিকে রাখতে হবে এতে শরীরের নিম্ন ভাগ থেকে রক্ত উপরের দিকে যাবে।

আরো কিছু করনীয়

কেও যদি চোখের সামনে হঠাৎ করেই অঙ্গান হয়ে যায়, প্রথমেই দেখতে হবে তার নিশ্বাস পড়ছে কিনা। নিশ্বাস পড়লে ঠিক আছে। আর যদি নিশ্বাস না পড়ে তাহলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও তার নিশ্বাস নেওয়ার জন্য যদি সে ভারী জামাকাপড় পড়ে থাকে তাহলে তার জামাকাপড় হালকা করে দেওয়া, যদি সে মাস্ক পড়ে থাকে তাহলে তার মাস্ক খোলে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর তাকে বসানোর সময় অবশ্যই তাকে চেয়ারে বসাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে চেয়ারটি হাতলযুক্ত কিনা। হাতলযুক্ত না হলে রোগী পড়ে যেতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো পালস। রোগীর পালস ঠিক আছে কিনা চেক করতে হবে। রোগীকে বাতাসের কাছে রাখতে হবে অর্থাৎ ফ্যান এর নিচে চিত করে পা উপরে দিয়ে শুয়িয়ে দিতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে অর্থাৎ সে সুস্থ বোধ করবে।

সতর্কতাঃ যদি সব ধরনের চেষ্টার পরেও রোগীর জ্ঞান ফিরে না আসে তাহলে বুজতে হবে সে কোন রোগের কারনে অজ্ঞান হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলতে হবে।