ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি হচ্ছে মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। যৌন হয়রানির ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে এটি সবথেকে বেশি আলোচিত একটি সমস্যা। যার ফলে উঠতি বয়সী মেয়েরা তারা নিরাপদে চলাচল করতে পারছে না। এমনকি স্কুল, কলেজেও যেতে তাদের নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এতে তারা মানসিক অশান্তিতে ভুগছে। কেউ কেউ এর প্রতিবাদও করতে পারছে না। এতে অনেকেই আত্মহরনের পথ বেছে নেয়। আবার কোন দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা এর প্রতিবাদ করতে পারে না। এমনকি তার বাবা মা দরিদ্র হওয়ার ফলে এর প্রতিবাদ করতে পারে না। যার ফলে সমাজে বখাটে ছেলেরা আরো বেশি মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করে থাকে। ইভটিজিং মূলত একটি ভয়ংকর রূপ। এর ফলে অনেক মেয়েদের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যৌন হয়রানির ফলে বাংলাদেশের অনেক মেয়েরা বা তরুণীরা তাদের গন্তব্যস্থলে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছে না। রাস্তাঘাটে অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখানের ফলে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে।
অনেক বখাটে ছেলেরা তাদেরকে নানাভাবে বিরক্ত করে থাকে। যদি তাদের প্রস্তাবে রাজি না হয় তবে তাদের জীবন পর্যন্ত তারা নিয়ে থাকে। মূলত বাংলাদেশে যৌন হয়রানির পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাই সমাজের সকল মানুষ কে অবশ্যই যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে হবে। তবেই এর পরিমাণ কমতে থাকবে। যৌন হয়রানি সেই প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। মূলত এটি অনেক আগে থেকেই ছিল। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকের জীবন দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরাও এর প্রতিবাদ করে থাকে। যৌন হয়রানি কে তারা দমন করার জন্য নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমানকে। এমনকি আরো অনেকেই এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে। আবার মমতাময়ী মা চাঁপা রানী সরকার ও যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাকেও লাশ হতে হয়েছে। মূলত যৌন হয়রানির ফলে অনেক মানুষের জীবন দিতে হয়েছে। তাই সকলে মিলে এর দমন করতে হবে। তবে যৌন হয়রানির পরিমাণ কমবে।
যৌন হয়রানি বা ইভটিজিং কি
ইভটিজিং (Eve teasing) হলো ইংরেজি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো মেয়েদের বিরক্ত করা বা উত্ত্যক্ত করা। এটি দিন দিন ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের আইনে এটি যৌন হয়রানি নামে পরিচিত। তবে উন্নত রাষ্ট্রগুলো যেমনঃ চীন, জাপান, গ্রেট ব্রিটেন, ইত্যাদি দেশগুলোতে এটা Sexual Harassment নামে পরিচিত। ইভটিজিং এর ফলে অনেক মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারা স্বাভাবিকভাবে স্কুলে যেতে পারছে না। অনেকেই প্রায় গৃহবন্দী হয়ে জীবন যাপন করছে। আবার অনেক বাধ্য হয়ে যদি তারা বাইরে যায়, তখনো তারা ইভটিজিং এর শিকার হয়। আবার অনেক পরিবারের সন্তানরা যখন বাইরে যায় তখন তার বাবা-মা তাদের নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকেন। মূলত স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম সমস্যা আশা করা যায় না।
যৌন হয়রানি বা ইভটিজিং এর স্থান
যৌন হয়রানির কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই। যৌন হয়রানির ফলে মেয়েদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে থাকে। মূলত এটি বাজার, রাস্তাঘাট, গলির সম্মুখে, জনসংখ্যা কম থাকে এমন জায়গায় ইত্যাদিতে তারা বেশি মেয়েদের বিরক্ত করে থাকে। এটাই তাদের নিরাপদ জায়গা। যেখানে অন্যরা তাদেরকে প্রতিরোধ করতে পারবে না। অনেক মেয়েরা রাস্তাঘাটে চলতে পারে না এমনকি যানবাহনেও তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে।
যৌন হয়রানি বা ইভটিজিং এর ফলাফল
ইভটিজিং হলো একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি দিন দিন অনেক ভয়ানক আকার ধারণ করছে। ইভটিজিং এর ফলে অনেক জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি তার আত্মহরনের পথ হাতে তুলে নিয়েছে। ফলে তারা ভালো ভাবে বাইরে যেতে পারে না। যে ইভটিজিং করে থাকে তারা মূলত সুস্থ মস্তিষ্কের নয়।তাদের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে। দেখা গেছে ইভটিজিং এর ফলে অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার অনেক পরিবারে অশান্তি দেখা দিয়েছে। কারো কারো আবার চরিত্রহীনতার কলঙ্ক রটেছে। সেই কলঙ্ক মুছতে গিয়ে তারা আত্মহত্যা করেছে। আবার কারো কারো পারিবারিকভাবে অনেক ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। যৌন হয়রানির পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
যৌন হয়রানির ফলে অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেসব ছেলেরা মেয়েদেরকে উত্তপ্ত করে থাকে তাদের কাছে মূলত এটা খেলা মনে হয়। কিন্তু একটা মেয়ের জীবনে এটা কখনো খেলা হতে পারে না। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হলো যৌন হয়রানি। তারা যৌন হয়রানির ফলে নিরাপদে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারেনা। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক চিন্তা করে থাকে। বিয়ের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের সমস্যা করে থাকে বখাটে ছেলেরা। বখাটে ছেলেদের প্রস্তাব যারা প্রত্যাখ্যান করে সেসব তরুণীদের জীবনে নেমে আসে কালো অন্ধকার ছায়া। সেসব বখাটে ছেলেরা ওই মেয়ের জীবন নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। যৌন হয়রানির ফলে দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ তরুণীর জীবন চলে যাচ্ছে। তারা অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের জীবন দিয়ে দিচ্ছে। এতে করে পরিবারের নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তারা তাদের সন্তানের শোক ভুলতে পারছে না। আবার অনেক দরিদ্র পরিবার রয়েছে যারা মান সম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছে না। এতে সেসব বখাটে ছেলেদের আচরণ আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবং সেসব পরিবারের মেয়েদেরকে আরো বেশি পরিমাণে বিরক্ত করে যাচ্ছে। মেয়েরা সেসব সহ্য করতে না পেরে তাদের জীবন দিয়ে দিচ্ছে। নানা ধরনে ইভটিজিংয়ের ফলে একটি দেশেরও নানা ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের অপসংস্কৃতি থেকে ইভটিজিং এর পরিমাণ দেশে দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সকলের উচিত ইভটিজিং এর সম্পর্কে সবাইকে বুঝানো।
ইভটিজিং প্রতিরোধের উপায়
বাংলাদেশের ইভটিজিং এর পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। মূলত এটার মূল কারণ হলো দেশের তরুণদের নৈতিক শিক্ষার অভাব।যার জন্য সমাজের সকল মানুষ কে এক হতে হবে। এমনকি যারা ইভটিজিং করে থাকে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। যদি আইনের আওতায় না আনা হয় তাহলে কখনো ইভটিজিং এর পরিমাণ কমবে না। ইভটিজিং প্রতিরোধের জন্য সকলকে এক হতে হবে। বিভিন্ন উঠতি বয়সী তরুণদেরকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। এতে ইভটিজিং এর পরিমাণ কমবে। বাংলাদেশ সরকার ইভটিজিং প্রতিরোধের জন্য নানারকম আইন তৈরি করেছেন। সেসব অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। আইন বাস্তবায়নের ফলেই ইভটিজিং আর হবেনা। যে ইভটিজিং এর শিকার হয়েছেন তার বিচার করতে হবে। কেননা সেখান থেকে অনেক তরুণরা ভয় পাবে। এবং ইভটিজিং করতে দ্বিতীয়বার ভাববে। তাই সকলের উচিত ইভটিজিং রোধ করার জন্য জন সচেতনতা সৃষ্টি করা। এবং পাশাপাশি আইনের সাহায্য নেওয়া। তবে ইভটিজিং এক সময় আর থাকবে না।
শেষ কথাঃ যৌন হয়রানি বা ইভটিজিং কি, ফলাফল ও প্রতিরোধের উপায়।
বর্তমান সময়ে ইভটিজিং হলো একটি সামাজিক বিকৃতি। ইভটিজিং এর ফলে অনেক কোমলমতি তরুণীরা স্কুলে, কলেজে যেতে পারছেন না। এমনকি তারা সুস্থভাবে চলাচল করতে পারছেন না। তারা যেখানে সেখানে ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছেন। এমনকি দেখা গেছে শুধু তরুনীরায় নয় অনেক মহিলারাও ইভটিজিং এর শিকার হয়ে থাকেন। যৌন হয়রানি সম্পর্কে সকলকেই বুঝাতে হবে। ইভটিজিং একটি মারাত্মক সমস্যা। ইভটিজিং সম্পর্কে যদি সমাজের সকল মানুষকে সচেতন করা হয় তাহলে সমাজে আর যৌন হয়রানি হবে না। অপরদিকে ইভটিজিং এর পরিমাণ বাড়বে না। এতে দেশে ও নানারকম বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে না। আবার দেশে সকল তরুণীদের কে তাদের অধিকার সম্পর্কে বুঝাতে হবে। কেউ যদি তাদেরকে নানাভাবে বিরক্ত করে তবে তারা ভয় না পেয়ে সে যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সে রকম ভাবে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে। আবার অনেক তরুণদেরকে বোঝাতে হবে ইভটিজিং একটি মারাত্মক অপরাধ। যদি দেশের তরুণরা বা যুবকরা ইভটিজিং সম্পর্কে বুঝতে পারে এবং তারা যদি নিজেদেরকে সচেতন করে, তবে তারা আর মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করবে না। এতে ইভটিজিং এর পরিমাণ কমে যাবে।