সাধারণত ঘুষ লেনদেন, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদিকে দুর্নীতি বলা হয়। দুর্নীতি হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক ব্যাধি। দুর্নীতি সম্পর্কে আমরা সবাই পরিচিত। সবাই কমবেশি জানি দুর্নীতি সম্পর্কে। সাধারণত দুর্নীতি আমাদের দেশে খুব দ্রুত ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আমাদের এই দুর্নীতির কারণ গুলো খুঁজে বের করা দরকার এবং দুর্নীতির কারণে কি কি ক্ষতি হয় সেগুলো চিন্তা ভাবনা করে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা জরুরী।
দুর্নীতির কারণ - কোন কোন কারণে মানুষ দূর্নীতি করে
দুর্নীতির বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সে কারণগুলোর মধ্যে দুর্নীতির কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো।
- সাধারণ স্বচ্ছলতার অভাবে দুর্নীতি গড়ে ওঠে। যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তারাই দুর্নীতি করে থাকে।
- জবাবদিহিতার অভাবে দুর্নীতি ঘটে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে জবাবদিহিতার অনেক অভাব রয়েছে। সেখানে দুর্নীতি করলেও জবাবদিহিতা করতে হয় না বলে প্রতিনিয়ত দুর্নীতি ঘটে চলেছে।
- উচ্চ বিলাস অর্থাৎ ভোগপ্রবণতা বৃদ্ধি দুর্নীতির অন্যতম কারণ। অনেক মানুষের চাওয়া পাওয়ার কোন অভাব থাকে না। তাদের উচ্চবিলাসী মনোভাব দুর্নীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- আইনের অসামঞ্জস্যতাও দুর্নীতির একটি কারণ।
- আয়-ব্যায়ের পার্থক্যের কারণে দুর্নীতি ঘটে থাকে।
- বেকার যুবকরা চাকরি পাওয়ার জন্য যখন মরিয়া হয়ে ওঠে তখন তারা ঘুষ দিতে পিছুপা হয় না। এই ঘুষ হলো এক ধরনের দুর্নীতি। আর যারা দুর্নীতি করে তারা সব সময় ঘুষ গ্রহনে অভ্যস্ত।
- সৎ উপার্জন দ্বারা ভরণ পোষণ করতে না পারা অর্থাৎ সৎ উপার্জনের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া। এ ব্যাপারটিও দুর্নীতির কারণ। যখন মানুষ তার সৎ পথে টাকা উপার্জন দিয়ে সচ্ছল ভাবে চলতে পারে না তখন সে দুর্নীতির পথ বেছে নেয়।
- অর্থ সম্পদ যখন মানুষের মর্যাদা বাড়ায় তখন মানুষ দুর্নীতির পথ বেছে নেয়। কারণ তারা মনে করে দুর্নীতির মাধ্যমে হলেও যদি আমার কাছে বেশি অর্থ থাকে তাহলে আমি সমাজে বেশি মর্যাদা পাবো।
- রাতারাতি অনেক অর্থ সম্পদের মালিক হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় যাদের মধ্যে, তারাই দুর্নীতি ঘটাতে থাকে প্রতিনিয়ত। অনেক মানুষ আছে যারা রাতারাতি বড়লোক হতে চায়, দুর্নীতির পথ তারাই বেছে নেয়।
- প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়ন্ত্রণের অনুপস্থিতি থাকলে দুর্নীতি ঘটে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে না পারলে দুর্নীতি ঘটে।
- নৈতিক শিক্ষার অভাব দুর্নীতির সব থেকে বড় কারণ। মানুষের মধ্যে যদি নৈতিক শিক্ষার অভাব থাকে তাহলে মানুষ দুর্নীতি ঘটাতে পিছপা হয় না।
- যাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই তারা দুর্নীতি ঘটিয়ে থাকে। কারণ একজন মানুষ জানে যে দুর্নীতির কারণে দেশের ক্ষতি হতে পারে তবুও সে দুর্নীতি করে। কারণ তার দেশের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই।
- আর্থিক অসচ্ছলতা থাকলে দুর্নীতির পথ মানুষ বেছে নেয়।
- এছাড়া জীবন যাত্রার মান নিম্ন হলে মানুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অধিক অর্থ উপার্জন করে জীবন যাত্রার মান বাড়ানোর চেষ্টা করে।
- দুর্নীতির শাস্তি সম্পর্কে অজ্ঞাত যারা তারা দুর্নীতি ঘটিয়ে থাকে। কারণ তারা জানে না যে দুর্নীতি করলে তার কি শাস্তি হতে পারে।
- আইনের শাসনের অভাবে দুর্নীতি ঘটে থাকে।
- বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাবে দুর্নীতি ঘটে থাকে।
- সৎকর্মচারীদের যখন তাদের যথাযথ মূল্যটা দেওয়া না হয় তখন তারা দুর্নীতির পথ বেছে নেয়। তারা এটা মনে করে যে আমরা সৎ তারপরেও আমাদের যথাযথ সম্মান টা দেওয়া হলো না, তাহলে আর সৎ থেকে লাভ কি। তখন তারা বেছে নেয় দুর্নীতির পথ।
- দুর্বল প্রশাসনও দুর্নীতির অন্যতম কারণ। তারা দুর্নীতি মোকাবেলা করার মতো ক্ষমতা রাখে না।
দুর্নীতি ক্ষতিকর কিছু দিক
- দুর্নীতি জনগণের দুর্ভোগ বাড়ায়।
- দুর্নীতি দেশের উন্নয়নে বাধা দেয়।
- দুর্নীতি দারিদ্রতা ডেকে আনে। দারিদ্রতার মূল কারণ হলো দুর্নীতি।
- দুর্নীতি আমাদের সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
- জাতীয় সংহতি বিপন্ন করে এই দুর্নীতি।
- দুর্নীতির ফলে আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদের কিছু অপচয় ঘটে।
- দুর্নীতির ফলে দুর্নীতিবাজরা রাতারাতি অনেক টাকার মালিক হয়ে যায়। ফলে তাদের আর আমাদের মধ্যে সামাজিক বৈষম্যের সৃষ্টি হয়।
- দুর্নীতি সুস্থ গণতন্ত্র বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
- দুর্নীতি সরকারি নীতিসমূহে কলুষিত করে।
- দুর্নীতির কারণে আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ গুলোর অসম বন্টন হয়।
দুর্নীতি মোকাবেলার উপায় - কিভাবে দূর্নীতি প্রতিরোধের উপায়
দুর্নীতি রোধ করার জন্য বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে নিচের উপায় গুলো উল্লেখযোগ্য।
- একটি শক্ত, সক্রিয় দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা। কারণ দুর্নীতি দমন করার একমাত্র ও অন্যতম উপায় হলো দুর্নীতি দমন কমিশন।
- যথাযথ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
- বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
- দক্ষ প্রশাসন গড়ে তোলা অর্থাৎ নিরপেক্ষ প্রশাসন গড়ে তোলা।
- সরকারের দায়িত্বশীলতা বাড়ানো জবাবদিহিমূলক মানসিকতা সৃষ্টি করা।
- সচেতনতা সৃষ্টি করা।
- দুর্নীতি মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখা।
- যারা দুর্নীতি করে তাদেরকে ঘৃণাক চোখে দেখা। তাদের সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশন কে জানানো।
- নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য সবচেয়ে অন্যতম যেটা প্রয়োজন সেটা হলো রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
- প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা।
- মানুষের বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
- গণমাধ্যমে দুর্নীতির প্রচারণা নিশ্চিত করা।
- তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করা।
- সৎ কর্মচারীদের তাদের যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া। সৎ যোগ্য ব্যক্তিরা যাতে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- দুর্নীতিবাজদের তিরস্কার করতে হবে। দুর্নীতিবাজরা যেনো শাস্তি পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।