ব্লগিং শুরু করতে কেমন টাকা খরচ হয়- আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক আশা করছি ভালো আছেন। আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে ২০২৪ সালে ব্লগিং শুরু করতে গেলে কেমন টাকা খরচ হতে পারে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করবো। আশা করবো আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
ব্লগিং কি?
প্রথমে আমরা জেনে নিবো ব্লগিং কি? সহজ ভাষায় বলতে গেলে ব্লগিং হচ্ছে লেখালেখি করা। অর্থাৎ আপনার যে বিষয়ে ভালো জ্ঞান আছে সেই বিষয়ের উপরে আর্টিকেল বা পোস্ট লিখে আপনার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন। আর সেই আর্টিকেল মানুষ গুগলে সার্চ করে পড়বে।
আরো সহজ ভাষায় যদি ব্লগিং আপনাদেরকে বুঝাতে চাই তাহলে আপনি এখন যে আর্টিকেল পড়ছেন এই পোস্টটি কিন্তু ব্লগিংয়ের কনটেন্ট। অর্থাৎ আপনি এখন এই পোস্টটি পড়ছেন Workup Deal ওয়েবসাইটে। আপনিও যদি ব্লগিং শুরু করতে চান তাহলে আপনারও একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন হবে আপনার আর্টিকেলগুলো প্রকাশ করার জন্য। যখন কেউ আপনার আর্টিকেল পড়বে তখন সেই পাঠককে গুগলের বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। সুতরাং মানুষের কাজে লাগে এমন সকল আর্টিকেল বেশি বেশি লেখতে পারলে এখানে দ্রুত সফলতা পাওয়া যেতে পারে। আশা করছি ব্লগিং সম্পর্কে আপনার প্রাথমিক ধারণা কিছুটা হলেও চলে আসছে।
ব্লগিং শুরু করতে কি কি লাগে?
এখন আমরা জেনে নিবো ব্লগিং করতে হলে বা ব্লগিং শুরু করতে হলে আসলে কি কি লাগে। ব্লগিং করতে ডিভাইস হিসাবে একটি কম্পিউটার অথবা ভালো কনফিগারেশনের একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন সহ ইন্টারনেট সংযোগ হলেই আপনি ব্লগিং শুরু করতে পারবেন। তার পাশাপাশি আপনার লেখা আর্টিকেলগুলো প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজন হবে একটি ব্লগ ওয়েবসাইট। এখন আপনি যদি প্রফেশনাল পর্যায়ে ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে কিছু টাকা খরচ করতে হবে। তাতে করে আপনার ব্লগিং হবে লম্বা সময়ের জন্য। আর যদি টাকা খরচ না করতে চান তাহলেও আপনি ব্লগিং শুরু করতে পারবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইট ততটা বেশি প্রফেশনাল হবেনা। যাইহোক এখন আমরা জানবো প্রফেশনার ভাবে ব্লগিং শুরু করতে মোট কত টাকার মতো খরচ হতে পারে।
ব্লগিং শুরু করতে কেমন টাকা খরচ হয়-২০২৪
প্রফেশনাল ভাবে ব্লগিং শুরু করতে হলে আমাদের প্রয়োজনীয় যা যা কিনতে হবে।
ডোমেইন।
হোস্টিং।
থিম
ডোমেইন নাম কি?
ডোমেইন হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইটের নাম বা ঠিকানা। আমরা যদি কারো বাড়িতে যেতে চাই তাহলে প্রথমে আমাদের সেই বাড়ির ঠিকানা প্রয়োজন হবে। ঠিকানা ছাড়া কিন্তু আমরা কারো বাড়ি যেতে পারবো না। ঠিক তেমনি আপনার ওয়েবসাইটে যদি কেউ আর্টিকেল পড়ার জন্য যেতে চাই তাহলে তার ঠিকানা প্রয়োজন হবে। আর এই ঠিকানাই হলো ডোমেইন নাম। যেমন আমাদের ওয়েবসাইট এর ঠিকানা workupdeal.com এখন কেউ যদি যেকোনো ব্রাউজার দিয়ে এই ঠিকানায় যায় তাহলে আমার আর্টিকেল পড়তে পারবে৷ এখন বিভিন্ন ধরনের ডোমেইন নাম পাওয়া যায় তাদের মধ্যে (.com, .net, .xyz এগুলোকে বলা হয় এক্সটেনশন) ইত্যাদি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ডোমেইন নাম হলো ডটকম। আপনি চাইলে ডট কম নিতে পারেন।
ডোমেইন এর দাম কত?
আমরা বিভিন্ন ধরনের ডোমেইন আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের ওয়েবসাইটে ব্যবহার করতে পারি। যেমন- (.com,.net,.org,.info) ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরনের ডোমেইন আছে। এখন এদের মধ্যে যেহেতু জনপ্রিয় ডোমেইন .com সেহেতু আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো। ডট কম ডোমেইন সাধারণত বাংলাদেশের মার্কেটে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অফার প্রাইজে এর থেকে অনেক কম দামেও কিনতে পারি।
তাহলে একটি ডোমেইন এর জন্য বাংলাদেশ মার্কেট ১,৫০০ টাকা বাজেট রাখলেই চলবে।
হোস্টিং কি?
এখন আমাদের ওয়েবসাইট বানানোর জন্য হোস্টিং লাগবে। তার জন্য প্রথমে আমরা হোস্টিং কি এটা সম্পর্কে জানবো। হোস্টিং হচ্ছে- আপনার ওয়েবসাইটের তথ্য বা ব্লগ পোস্ট গুলো যেখানে জমা থাকবে সেটাই হোস্টিং। এখন আপনার আর্টিকেলগুলো যদি আপনার মোবাইলের নোট প্যাড বা মেমোরিতে রাখেন তাহলে তো আর মানুষ সেটা দেখতে পারবেনা। তারজন্য আমাদের প্রয়োজন হবে এমন একটি জায়গা বা মেমোরি যেটা ২৪ ঘন্টা ইন্টারনেটে সচল থাকবে৷ অর্থাৎ যেকোনো সময় যদি মানুষ আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের আর্টিকেল, ভিডিও, অডিও, ছবিসহ ইত্যাদি দেখতে পারবে। যেহেতু আমাদের আর্টিকেল পড়লেই আমরা ইনকাম করতে পারবো সেহেতু আমাদের উচিত কোন একটি ভালো ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং নেওয়া।
হোস্টিং এর দাম কত?
আপনি যদি মোটামুটি ভালো মানের এবং ভালো কোম্পানি থেকে শেয়ারেড হোস্টিং নিতে চান তাহলে আপনার ১জিবি হোস্টিং এর জন্য ১৫০০ টাকা লাগতে পারে প্রতি বছরের জন্য৷ এটাও বিভিন্ন সময়ে এর থেকে কমেও পাওয়া যেতে পারে। এখন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কত জিবি হোস্টিং লাগবে সে অনুযায়ী হোস্টিং নিতে হবে। তবে আমি মনে করি ব্লগ ওয়েবসাইট শুরুর দিকে আপনি ১ জিবি হোস্টিং নিয়েও শুরু করতে পারেন যদি আপনার বাজেট কম থাকে৷ আর যদি বাজেট বেশি থাকে তাহলে আমি বলবো আগে থেকেও বেশি হোস্টিং নিয়ে নিতে পারেন।
বি:দ্র: ডোমেইন এবং হোস্টিং যদি ১ বছরের জন্য নেন৷ তাহলে কিন্তু পরের বছর আবার রিনিউ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যত বছর বা যত সময়ের জন্য নিবেন সেই সময় শেষ হওয়ার একটু আগেই রিনিউ করে নিবেন।
ফ্রি হোস্টিং?
এখন যদি আপনার হোস্টিং কেনার মতো টাকা না থাকে তাহলে আপনি ফ্রি হোস্টিং নিতে পারেন। অর্থাৎ শুধু মাত্র একটি ডোমেইন কিনে ব্লগারের সাথে যুক্ত করে ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করতে নিতে পারবেন। তার জন্য আপনার কোন হোস্টিং কেনার প্রয়োজন হবেনা। পাশাপাশি প্রতি বছর হোস্টিং রিনিউ করে টাকা খরচও হবেনা। ফ্রি হোস্টিং নিলে আমার ওয়েবসাইটের ডিজিটাল নিজের ইচ্ছে মতো করতে পারবেন না। তবে ব্লগারেও অনেক ভালো ভালো থিম পাওয়া যায় যেগুলো দিয়ে শুরু করতে পারবেন।
থিম কি?
থিম হচ্ছে মূলত একটি ডিজাইন। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে। আপনার ওয়েবসাইটের গঠন, সাইটের কোন পাশে কি রাখবেন, কোন পাশে কয়টি পোস্ট দেখাবেন ইত্যাদি। আমরা যদি ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঘুরাঘুরি করি তাহলে আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ডিজাইন দেখতে পারি এবং সেখান থেকে ধারণা নিতে পারেন। তাছাড়া কোন ওয়েবসাইটের ডিজাইন বা থিম যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে সেই থিম বা ডিজাইন আপনিও বানাতে পারবেন।
থিম দাম কত?
ব্লগার থিমের থেকে ওয়ার্ডপ্রেস থিমের দাম অনেকটা বেশি হয়ে থাকে। আপনি যদি নতুন ব্লগিং শুরু করেন তাহলে ফ্রি থিম দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। আর যদি আপনার বাজেট থাকে তাহলে টাকা দিয়ে একটি প্রিমিয়াম থিম কিনে নিতে পারেন। তবে মোটামুটি ভালো মানের একটি ওয়ার্ডপ্রেস প্রিমিয়ার থিমের দাম ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। আর যদি ব্লগার প্রিমিয়াম থিম দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করেন তাহলে ১৫০০ টাকার নিচেই পেয়ে যাবেন। আর ব্লগারে যেহেতু হোস্টিং কিনতে হচ্ছে না সেহেতু হোস্টিং এর টাকা থিম হয়ে যাবে। আর ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে প্রফেশনাল প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ওয়েবসাইট বানাতে হলে, ডোমেইন, হোস্টিং এবং থিম তিনটাই কিনতে হবে।
সবকিছু কেনা হয়ে গেলে ওয়েবসাইট সেটাপ করতে হবে। আপনি যদি ইউটিউব এর সহযোগিতা নিয়ে নিজে করতে পারেন তাহলে টাকা লাগবেনা। আর যদি নিজে না পারেন তাহলে একজন ভেবলপার এর সহযোগিতা নিতে পারেন। তাকে কিছু টাকা দিলে সে ওয়েবসাইট সেটাপ করে দিবে। যেহেতু সে সময় দিয়ে আপনার কাজ করে দিবে তাই তাকে অবশ্যই টাকা দিতে হবে। ওয়ার্ডপ্রেস সাইট সেটাপের জন্য ১৫০০ টাকা লাগতে পারে। আর ব্লগার সাইট সেটাপের জন্য ৫০০ টাকা লাগতে পারে। ওয়েবসাইট সংক্রান্ত তথ্য বা সেবার জন্য যোগাযোগ পাতা ব্যবহার করুন।
বি:দ্র: একদম টাকা ছাড়া অর্থাৎ ডোমেইন, হোস্টিং এবং থিম না কিনেও ব্লগিং করা যায় বা ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। এবং সেই ব্লগ থেকে একই নিয়মে টাকাও আয় করা যায়। তারজন্য একটু ধৈর্য আর সময়ের প্রয়োজন হয়। আর একদম ফ্রিতে ওয়েবসাইট বানালে সেটা দেখতে প্রফেশনাল ওয়েবসাইট মনে হয় না।
আশা করছি, একটা ধারনা পেয়েছেন একটি প্রফেশনাল ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করতে মোট কত টাকা খরচ হতে পারে। এখানে আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো একটা আর্টিকেলে লেখা সম্ভব না। তাই এরকম আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ