সৃষ্টিকর্তা এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, পশু, পাখি, জীবজন্তু, পাহাড়, পর্বত, নানা ধরনের জিনিস তৈরি করেছেন। তার মধ্যে মহান আল্লাহতালার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি হলো মানুষ। মানুষের প্রকৃতি হলো দুটি নারী এবং পুরুষ।
সৃষ্টি জগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। কেননা তারা একে অপরকে ছাড়া চলতে পারে না এবং বাঁচতেও পারে না। নারী যেমন পুরুষের উপর নির্ভরশীল, পুরুষও ঠিক তেমনি নারীর উপর নির্ভরশীল।
নারী এবং পুরুষের নির্ভরশীলতায় গড়ে উঠেছে একটি সম্পর্ক। একটি গাছের সাথে তাদের তুলনা করা যায়। একটি গাছের শেকড় ছাড়া যেমন গাছ বাঁচতে পারে না, আবার গাছ ছাড়া শেকড় মূল্যহীন। ঠিক তেমনি একজন নারী ছাড়া পুরুষ থাকতে পারেনা। আবার পুরুষ ছাড়া নারীরও কোন মূল্য নেই। প্রাচীন কাল থেকে গড়ে উঠেছে নারী এবং পুরুষের সম্পর্ক। তাদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে নারীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সভ্যতা গড়তে যে শুধু পুরুষরাই রয়েছে, তা নয় অনেক নারীরাও রয়েছে। তারা সভ্যতার ইতিহাসের পেছনে রয়েছে। একজন নারীকে বাদ দিয়ে কোন পুরুষ পূর্ণতা পেতে পারে না। পুরুষকে অবশ্যই নারীর সাহায্য নিতেই হবে। তাইতো পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত নারী-পুরুষের সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে এই সুন্দর পৃথিবী। গড়ে উঠেছে এই মানব সমাজ। এবং তারা একসাথেই এ পৃথিবীতে নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। যদি নারী না থাকতো তাহলে পুরুষ কখনো কোনদিনও এভাবে কাজ করতে পারত না। তাই নারীর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
নারীর অধিকার
নারীর অধিকার বলতে নারীকে সব দিক থেকে তার প্রাপ্য পাওয়াকে বুঝানো হয়েছে। প্রাচীনকালে আদিম যুগে মেয়েদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হতো না। এমনকি আগে মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে তাদেরকে মাটিতে পুঁতে দিত। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) দুনিয়াতে আসার পর তিনি নারীর অধিকার নিশ্চিত করেন। ইসলামে নারীকে অধিকার দেয়া হয়েছে। এমনকি তাদের অধিকার সম্পর্কে সকলকেই সচেতন হতে বলেছেন। কেননা যে ব্যক্তি নারীর অধিকার মূল্যায়ন করে না বা পূরণ করে না তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইসলামে নারীকে এমন এক মর্যাদা নেয়া হয়েছে যে নারীর অর্থাৎ" একজন মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত" অর্থাৎ এ কথাটির ধারা তার অধিকারকে বোঝানো হয়। ইসলামে নারীকে তার প্রাপ্য অধিকারটুকু দেয়া হয়েছে। আবার মানব সমাজেও নানা ধরনের কুসংস্কার ছিল। কিন্তু এখন তা দূরীভূত হয়েছে। আমাদের দেশে অনেক আইন তৈরি হয়েছে।নারীর অধিকার সম্পর্কে সেসব আইন রয়েছে এখন সবাই পালন করছেন। তারা নারীদের অধিকার নিশ্চিত করছেন। সম্পদের ক্ষেত্রে, পড়াশোনার ক্ষেত্রে, কর্ম ক্ষেত্রে, চাকরির ক্ষেত্রে, সর্ব ক্ষেত্রে নারীর অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে। এখন নারীরা কোন ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পিছয়ে নেই। তারা পুরুষদের সাথে কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন। এমনকি তারা আজ বিভিন্ন ধরনের বড় বড় কোম্পানি, বড় বড় হল, শিল্প কারখানা, ইত্যাদিতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি অনেক বড় অফিসার পদেও নারী রয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, এমনকি এখন ফায়ার সার্ভিসেও নারীকে নেয়া হচ্ছে। সবশেষে একটাই কথা বলা হয় যে, বর্তমানে কোন দিক থেকে পিছিয়ে নেই তারা। এখন পৃথিবীর সব প্রান্তেই তাদের নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। তাদেরকে কেউ অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারছেন না। তাই দেশের উন্নতির পেছনেও নারীর ভূমিকা রয়েছে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নারীর শ্রম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখন শুধু পুরুষরাই নয় নারীরাও দেশকে উন্নতির চরম শেখরে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এখন নারীকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তারা সমাজ গঠন, জাতি গঠন, এমনকি দেশকে পরিচালনা করার কাজেও নারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
নারীর মাতৃত্ব
একটি নারীর অহংকার হলো তার মাতৃত্ব। কেননা মাতৃত্ব ছাড়া কোন নারীর মূল্য থাকে না। নারীর সম্মান, নারীর মর্যাদা, তাকে অনেক উপরে নিয়েছে। দেশ গঠনেও নারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তারা তাদের সন্তানদের কে এমন ভাবে মানুষ করে যে, সন্তান একসময় দেশকে পরিচালনা করবে। এ পৃথিবীতে যত বিজ্ঞানী, দার্শনিক, চিকিৎসক, ডাক্তার, শিক্ষক, মহামানব, কবি, সাহিত্যিক, ইত্যাদি পৃথিবীতে এসেছেন তারা কোন না কোন মায়ের সন্তান। মা যদি না থাকতো তাহলে কখনোই তারা এই পৃথিবীতে আসতে পারতো না। এ পৃথিবীতে যত মহামানব রয়েছে তারা অবশ্যই মায়ের পেট থেকে এসেছে। তাই মা ছাড়া এ সমগ্র পৃথিবী কখনোই উন্নতির পথে যেতে পারত না। কখনোই নতুন নতুন উদ্ভাবক, বা নতুন নতুন আবিষ্কারকের জন্ম হতো না। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন নারী নানা রকম ভাবে কাজ করে থাকে। ভবিষ্যতে যে চিকিৎসক, ডাক্তার, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ইত্যাদি তৈরি হবে তাও সে মায়ের কাছ থেকে জন্ম নিয়েই হবে। কেননা তারা যদি জন্মগ্রহণ না করে তাহলে কখনোই ভবিষ্যতে হতে পারবে না। একজন মা তার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলে। এবং সেই সন্তান একসময় এই সমাজকে নানা রকমের পাপ কাজ থেকে রক্ষা করে। নানা রকম কুসংস্কার থেকে মানুষকে তুলে নিয়ে আসে।
দেশ গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা
এ বিশাল ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ সেখানে প্রায় অর্ধেক রয়েছে পুরুষ এবং অর্ধেক নারী। নারী ছাড়া কখনোই দেশ স্বাধীনতা লাভ করতে পারত না। কেননা তাদের অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ। অনেক মা হারিয়েছে তার সন্তান কে, অনেক স্ত্রী হারিয়েছে তার স্বামীকে, অনেক বোন হারিয়েছে তার ভাইকে। নারীরা যদি কখনো আত্মত্যাগ না করত তাহলে দেশ স্বাধীন হতো না। ১৯৭১ সালের এই মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি তারা না কাজ করতো তাহলে কখনোই বাংলাদেশ মুক্ত হতো না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। অনেক মায়ের ছেলে রক্ত দিয়ে ঢাকা রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ মায়েরা যদি না আত্মত্যাগ করত তাহলে কখনোই আমরা বাংলা ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে পারতাম না। আজ নারী যদি তার স্বামীকে ঢাকা রাজপথে না যেতে দিত তাহলে কখনোই আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। শুধু ১৯৫২ সালে নয় ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৬২ সাল, ১৯৬৬ এর নির্বাচন, থেকে তারা নানা ভাবে পুরুষকে সাহায্য করেছেন। নারী সমাজ যদি পুরুষদের কে তৈরি না করতো, যদি পুরুষকে উৎসাহ বা উদ্দীপনা না দিত তাহলে কখনো পুরুষরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে যেতে পারত না। নারীদের উৎসাহ দেওয়ার ফলে পুরুষরা পেয়েছেন তাদের মনের শক্তি। তাদের অপরিসীম ত্যাগের ফলে পুরুষ তৈরি হয়েছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। এ দেশের স্বাধীনতার পিছনেও নারী সমাজের ভূমিকা অনেক। কেননা শুধু পুরুষরাই দেশকে স্বাধীন করতে পারে নি। যদি নারী সমাজ তাদের কে সাহায্য না করতো তাহলে তারা যুদ্ধে যেতে পারত না। অনেক যৌথ বাহিনী কেউ তারা নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। রাতের অন্ধকারে তাদের জন্য খাবার তারা রান্না করেছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিতেন। যৌথ বাহিনীরাও খেয়ে যেতেন এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য নিতেন। আজ নারী সমাজকে বাদ দিয়ে কখনো এ দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না। নারী সমাজ এ দেশকে অনেক উন্নতির পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। বিভিন্ন শিল্প সাহিত্য ক্ষেত্রেও নারী সমাজের পদচারণা সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার। কেননা তারা আজ সকল বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। সকল বিষয়ে জ্ঞান তাদের মধ্যে রয়েছে। তাদের হাত ধরেই জন্ম হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তাদের মধ্য থেকেও অনেকেই দেশ পরিচালনার অংশগ্রহণ করে থাকে। তাই নারী সমাজের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা
নারীরা আজ ঘরে সীমাবদ্ধ নেই। তারা কর্ম ক্ষেত্রে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আজ তারা ঘরে বসে সারা পৃথিবীকে পরিচালনা করতেছেন। সে প্রাচীনকাল থেকে আজ অব্দি পর্যন্ত মানব সভ্যতার ইতিহাসে তারা নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারা আজ কোন ক্ষেত্রেই পুরুষদের থেকে পিছিয়ে নেই। পুরুষদের সাথে সমান সমান হয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তারা যেমন একটি সংসার গোছাচ্ছেন ঠিক তেমনি একটি দেশকেও পরিচালনা করছেন। তারা ঘরেও যেমন কাজ করছেন ঠিক তেমনি বাইরেও তারা সমান পারদর্শী হয়ে কাজ করছেন। এই দেশ, এই জাতি গঠনে নারীরা অনেক পরিশ্রম করে থাকে। আজ অনেক ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে। এখন গ্রাম অঞ্চলেও নারীরা শিক্ষা লাভ করে থাকে। আজ গ্রাম থেকেও অনেক নারীরা অনেক কিছু করতে পারেন। কোন জায়গায়, কোন অঞ্চলে নারীরা এখন পিছিয়ে নেই। নিজ নিজ অবস্থান থেকেই তারা স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন। আজকের নারী সমাজের কর্মক্ষেত্র কেবল বিশেষ বিশেষ দিনে সীমাবদ্ধ নয়। আজ নারী সমাজের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে। দিন দিন অনেক নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। ঘরে বাইরে আজ তারা সমান অভ্যস্ত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু ঘরেই নয় তারা আজ বাইরে তারা নিজ নিজ পরিচয় গড়ে তুলতে পেরেছেন। কর্মক্ষেত্রে অনেক নারীরা অনেক ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। আগে নারীদেরকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হতো না। কিন্তু এখন নারীরা শুধু ঘরেই নয় সারা পৃথিবীতে তাদের পরিচয় কে তুলে ধরছেন। নিজ পরিচয় কে আরো শক্ত করতে তারা অনেক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশকে পরিচালনা এবং দেশের উন্নতির জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের সংস্থার সাথে যুক্ত হচ্ছেন। আজকের নারী সমাজ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। আজ দেশেই নয় বরং অনেক নারীরা বিদেশেও গিয়ে পড়াশুনা করছেন। সেখান থেকে তারা দেশকে পরিচালনা করছেন। এতে দেশের সুনাম হচ্ছে এবং দেশ অনেক উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ শিক্ষা ক্ষেত্রে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে, এমনকি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও নারী সমাজের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ বড় বড় চাকরির ক্ষেত্রে নারীরা সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তারা পরিবারকে বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি দেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে। এবং এক সময় দেশ আরো উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবেন।
আজকের নারী
আজকে নারীরা নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন। সবার সামনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। এমনকি নিজের পরিচয় কে শক্তভাবে তৈরি করার জন্য লড়াই করতে পেরেছেন। আজকে নারীরা কখনোই বৈষম্য মানতে রাজি নয়। যেখানে অন্যায় হবে সেখানে তারা লড়াই করতে জানে। কারো অধিকার আজকের সমাজে কেউ হনন করতে পারে না। কেননা আজকের নারীরা হয়েছে বহুরূপী হিসেবে। আজকের নারীরা কুসংস্কার মুক্ত। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে তারা। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে তাদের অনেক পরিবর্তন এসেছে। আজ তারা ঘরে এবং বাইরে সমান তালে, সমান হারে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি তারা নিজেদেরকে আরো মর্ডান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা ভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। এখন দেখা যায় বিভিন্ন গ্রামে অনেক ধরনের নারী উদ্যোগতা রয়েছে যারা গ্রামকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নানারকম কাজ করে থাকে। অনেক কিশরীদেরকে নিয়ে তারা সচেতন মূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে। এবং তাদেরকে সচেতন করে। নারীর অধিকার সম্পর্কে বর্তমানে বাল্যবিবাহ আইন রয়েছে। বর্তমানে কোন জায়গায় বাল্যবিবাহ হয় না। এতে নারীরা শিক্ষার অনেক সুযোগ পায়, এবং নিজেকে সু প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাই। নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে বেগম রোকেয়ার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তিনি চেয়েছিলেন নারীকে কুসংস্কার মুক্ত করতে। তিনি চেয়েছিলেন নারী যেন তার নিজ অধিকারে বাঁচতে পারে। আজ বেগম রোকেয়ার ইচ্ছা সফল হয়েছে। আজকের নারীরা কখনোই বসে নেই, তারা নিজ নিজ যোগ্যতাই কাজ করে যাচ্ছেন। নারীদের কর্মসংস্কারের ফলে পরিবারে নানা ধরনের চাহিদার পূরণ হচ্ছে। অর্থনৈতিক চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে ঠিক তেমনি বিভিন্ন ধরনের খাদ্য বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, ইত্যাদি আরো নানারকম অভাব পূরণ হচ্ছে। এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে আজকের নারীরা এবং প্রাচীনকালের নারীরা এক নয়। আজকে নারীরা তারা নিজেদের নিয়ে ভাবতে জানে। এই দেশের উন্নতির লক্ষ্যে নারীরা অনেক রকমের কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি স্যাটেলাইট সহ বিভিন্ন ধরনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নারীরাও পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন ধরনের গবেষণার কাজেও আজ নারীরা সমান হারে কাজ করছেন।
নতুন প্রজন্ম অর্থাৎ জাতি গঠনে নারী সমাজের ভূমিকা
আজকের এই জাতি গঠনের ক্ষেত্রে নারী সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কেননা একজন নারী পারে তার সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আর সে সন্তান যদি আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে তাহলে সে সমাজে একজন আদর্শ নাগরিক হয়ে উঠবে। এবং পরবর্তীতে সে নানা ধরনের ভালো কাজে লিপ্ত হবে এতে সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে তথা দেশের উন্নতি হবে। নতুন প্রজন্মকে যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয়,তাদেরকে যদি নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয় তবে তারা কখনোই অবনতির দিকে যাবে না। এবং তারা একসময় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করবে। দেশের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করবে। একটি দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, এমনকি সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অঙ্গনে তারা কাজ করে যাবে। একজন সুনাগরিক অবশ্যই একটি দেশের সম্পদ। সে দেশের নানা রকম উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে এবং দেশের উন্নতি হয়ে থাকে। যদি নতুন প্রজন্মকে সেই সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা হয় তাহলে সেও একসময় দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। সেই নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার দায়িত্ব হলো একটি নারীর। যদি নারী না থাকতো তাহলে কখনোই নতুন প্রজন্ম সঠিকভাবে তাদের কাজ করতে পারত না। আজ নারী সমাজ আছে বলেই দেশ নানা রকম উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। নারী সমাজের ভূমিকা দেশ গঠনে অনেক। কেননা নারী সমাজ তাদের সর্বশেষ টুকু দিয়ে হলেও চেষ্টা করে দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার। একটি জাতি গঠনের জন্য নারী নানা রকম সাহস এবং উদ্দীপনামূলক কাজ করে থাকেন। একজন পুরুষকে তিনি নিজে সব টুকু দিয়ে তাকে সাহায্য করে থাকেন। নিজের সবটুকু দিয়ে হলেও দেশকে সাহায্য করে থাকেন।
উপসংহারঃ একটি দেশ এবং আদর্শ জাতি গঠনে নারী সমাজের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা নারী সমাজ যদি না থাকতো তাহলে কখনো একে আদর্শ জাতি গড়ে উঠত না। আজ নারীরা পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রে কাজ করার ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি নানা সামাজিকভাবেও তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এতে সমাজও অনেক উন্নতি হচ্ছে। তাছাড়া নারী সমাজ যদি না থাকতো তাহলে পুরুষ একা কখনোই উন্নতি করতে পারত না। আজকের নারীরা যদি নিজেকে যদি বহুরূপী হিসেবে গড়ে না তুলতো তাহলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হত না। কেননা ঘরে বসে থাকলেই দেশ এগিয়ে যেত না তারা বাইরে কাজ করছে বলেই দেশ এগিয়ে যেতে পারছে। সেই সূচনা লগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত নারী সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারী দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কথা চিন্তা করে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
"বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর"
এই উক্তিটি দ্বারা নারী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কথায় বুঝা যায়।