
মোবাইল ব্যাংকিং কি?
মোবাইল ব্যাংকিং এর শুরুর যাত্রা ও সুযোগ-সুবিধা
বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় ব্যাংকিং হলো মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। ঘরে বসে সহজে টাকা লেনদেন করার মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকদের কাছে সেবা দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে রিমোটলি স্মার্টফোন অথবা ট্যাবলেট এর মাধ্যমে ব্যাংকের সকল সেবা গুলো এক্সেস করতে পারে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং বর্তমানে জনপ্রিয় হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকেই এই ব্যাংকিং সেবা সম্পর্কে অবগত নয়। তাই আজকের আর্টিকেলটি মনযোগ দিয়ে পড়লে জানতে পারবেন মোবাইল ব্যাংকিং কি, মোবাইল ব্যাংকিং শুরুর যাত্রা সহ ইত্যাদি সম্পর্কে।
মোবাইল ব্যাংকিং শুরুর যাত্রা
এখন আমরা জেনে নিবো মোবাইল ব্যাংকিং কত সালে যাত্রা শুরু করে এবং বাংলাদেশে কত সালে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়। তাছাড়া এটাও জানাবো কোন ব্যাংক বাংলাদেশে প্রথম মোবাইল ব্যাংকিং চালু করে। আমরা হয়তো অনেকে জানি, মোবাইল ব্যাংকিং যাত্রা শুরু করে খুব বেশিদিন হয়নি। স্মার্টফোন আসার পরে মোবাইল ব্যাংকিং এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯০ সালে স্মার্টফোন আবিষ্কার হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের পর থেকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা তাদের যাত্রা শুরু করে। তবে জেনে রাখা ভালো ১৯৯৯ সালে এসএমএস এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা চালু ছিলো। কিন্তু তা বিস্তার লাভ করেনি সেটি এসএমএস (SMS) ব্যাংকিং নামে পরিচিত ছিল। তারপর ২০১০ সালে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট বিস্তার লাভ করার পর তখন মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রচলন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
২০০২ সালে ভারতে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। যা ট্রানজেকশন এসএমএস (SMS) এর মাধ্যমে করা হতো।
এরপর ২০১১ সালে বাংলাদেশে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা চালু করে। যার নাম দেওয়া হয় রকেট।
মোবাইল ব্যাংকিং কি?
মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা হচ্ছে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত গ্রাহকদের স্মার্টফোন বা ফিচার ফোন অথবা ট্যাবলেট এর মতো মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে দুর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করার সুবিধা প্রদান করে।অর্থাৎ একজন গ্রাহক মোবাইলের মাধ্যমে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। মোবাইল ব্যাংকিং আসার পর আর্থিক লেনদেনকে এতটাই সহজ করে দিয়েছে যে, মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং এর বিভিন্ন রকম কাজ করার জন্য গ্রাহককে ব্যাংকে যেতে হয় না। তিনি চাইলে ঘরে বসে তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তা করতে পারেন। মোবাইল ব্যাংকিং এর অনেক সুবিধা থাকায় দিন দিন এর গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এ আরো নতুন নতুন কার্যক্রম যোগ হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা ২৪ ঘন্টা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা সমূহ
বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং আস্তে আস্তে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে গ্রাহকদের যার কারণে মোবাইল ব্যাংকিং এর গ্রাহক সংখ্যা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা সমূহ নিচে দেওয়া হল।
১) মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রথম সুবিধা হচ্ছে একজন মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক যেখানেই থাকুক না কেন তার স্মার্টফোনের সাহায্যে তিনি সব জায়গায় ব্যাংকিং এর সেবা গুলো ব্যবহার করতে পারবেন ২৪ ঘন্টা।
২) মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার একাউন্টে থাকা ব্যালেন্স বা লেনদেনের পরিমাণ মোবাইলের মাধ্যমে অথবা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে চেক করতে পারবেন খুব সহজেই।
৩) মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে খুব সহজে ঘরে বসে কাউকে টাকা পাঠাতে চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সেন্ড মানি করতে পারবেন বিনামূল্যে। তবে যাকে আপনি টাকা পাঠাতে চান তাকে একজন মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট ব্যবহারকারী হতে হবে।
৪) একটা সময় ছিল যে কোন বিল পরিশোধের জন্য অফিসে দৌড়াদৌড়ি করতে হতো। যার ফলে সময় এবং অর্থের অপচয় বেশি হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা এই ব্যবস্থাকে অনেকটা সহজ করে দিয়েছে। ঘরে বসে এখন যে কোন বিল পেমেন্ট করা যাবে মূহুর্তের মধ্যেই। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে ঘরে বসে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ইলেকট্রিক এবং ইন্টারনেট বিল পে করতে পারবেন।
৫) একটা সময় ছিলো শপিং এ গেলে কেনাকাটা শেষে টাকা দেওয়ার সময় দেখা যেতো পরিমাণ মতো খুচরা টাকা নেই৷ তখন সেই টাকা নিয়ে দৌড়া দৌড়ি করে ভাঙতি করে আনতে হতো তারপর বিল পরিশোধ করতে হবো। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসব কোন ঝামেলা নেই। আপনি ঘরে বসে অনলাইনে শপিং করে আপনার মোবাইল ব্যাংকিং থেকে টাকা পরিশোধ করে দিলেন। আর আপনার পন্য সামগ্রি হোম ভেলিভারিতে পেয়ে যাবেন। এখানে হাতে টাকা পয়শা দেওয়ার কোন ঝামেলা থাকছেনা। তাছাড়া বর্তমানে প্রায় বেশির ভাগ দোকানে কেনাকাটা করেও মোবাইলে ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায়।
৬) এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট, প্লেনের টিকিট, মোবাইল রিচার্জ সহ আরো নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা গুলো একজন মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক পাচ্ছে।
৭) বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং এ পরিমাণ মতো টাকা রাখলে শেখানে মুনাফা পাচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহকরা।
বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং গুলো কি কি
বর্তমানে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং এর পরিমাণ অনেক। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে সুযোগ-সুবিধাগুলো বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এখন আমরা জেনে নিবো বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নাম এবং কোন ব্যাংকের অধীনে পরিচিত হয়।
- বিকাশ- ব্রাক ব্যাংক।
- নগদ- ডাক বিভাগ।
- রকেট- ডাচ বাংলা ব্যাংক।
- শিওর ক্যাশ- রুপালী ব্যাংক।
- রেডি ক্যাশ- জনতা ব্যাংক।
- ইউ ক্যাশ (উপায়)-ইউসিবি ব্যাংক।
- এম ক্যাশ- ইসলামী ব্যাংক।
- মাই ক্যাশ- মার্কেন্টাইল ব্যাংক।
- ওকে ওয়ালেট- ওয়ান ব্যাংক।
- ট্যাপ- ট্রাস্ট ব্যাংক।
- এজেন্ট ব্যাংকিং- ব্যাংক এশিয়া।
- পল্লী লেনদেন- পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক।
- ট্যাপ এন পে- মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড।
- টেলিক্যাশ- সাউথইস্ট ব্যাংক।
- ইসলামিক ওয়ালেট- আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক।
শেষ কথা- মোবাইল ব্যাংকিং কি - মোবাইল ব্যাংকিং এর শুরুর যাত্রা ও সুবিধা
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যারা শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি আমাদের আর্টিকেল ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।